দেশে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। নতুন করে কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকেও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২ অক্টোবর থেকে এ বন্দরে ফ্লাইট চালু হওয়ার কথা। এরই ধারাবাহিকতায় এখন চলছে প্রস্তুতিপর্ব। তবে যথাসময়ে ফ্লাইট চালু হওয়া নিয়ে রয়ে গেছে সংশয়। এখান থেকে ফ্লাইট চালনায় এখনো পর্যন্ত আগ্রহ প্রকাশ করছে না বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো। বিশেষ করে যাত্রী চাহিদা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে তাদের।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হবে, বিষয়টি এমন নয়। মূলত এয়ারফিল্ড বা বিমানবন্দর প্রস্তুত করার চেষ্টা করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বা বেবিচক। এয়ারলাইন্সের সম্মতি ও প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করবে ফ্লাইট চালুর বিষয়টি। জানা গেছে, শুরুতে দিনে নয়, শুধু রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর দিনের বেলায় চলবে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট।প্রাপ্ত তথ্য মতে, ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও সিলেট দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলেও যাত্রীর অভাবে পর্যাপ্ত ফ্লাইট পরিচালনা করা হয় না। তদুপরি কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণায় পর্যাপ্ত যাত্রী মিলবে কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে। বিদেশি পর্যটকসহ আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী মিলবে, এমন সম্ভাবনাও কম বলে মনে করছেন এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা। ফলে কারও বিশেষ নির্দেশনা কিংবা অনুরোধে তড়িঘড়ি করে ফ্লাইট চালুর চিন্তা কতটা যৌক্তিক,
সেটিও বিবেচনার দাবি রাখে বলে মনে করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (আইকাও) বিধানমতে, ফ্লাইট চালুর ন্যূনতম ৫৬ দিন আগে এটি অবহিত করতে হয়। তবে প্রয়োজনে এ সময়কাল পেছানোর সুযোগ রয়েছে।বেবিচক সদস্য (এটিএম) গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ নুর-ই-আলম বলেন, আইকাও রুলস অনুযায়ী, এভিয়েশন খাতে বড় ধরনের পরিবর্তনের জন্য ৫৬ দিন আর সাধারণ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ৪২ দিনের বাধ্যবাধকতা আছে। রানওয়েসহ অবকাঠামোগত দিক থেকে প্রস্তুত হচ্ছে বেবিচক। সে জন্য ৭ আগস্ট জানানো হয়েছে যেন ২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল কার্যকর করা যায়।সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট থেকে বাংলাদেশ বিমানের ট্রানজিট ফ্লাইট বেশি চলে। চট্টগ্রাম থেকে কিছু ফ্লাইট সরাসরি চলে। কিন্তু কক্সবাজার থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট চলাচলে আগ্রহী বিদেশি কোনো এয়ারলাইন্স এখনও মেলেনি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ইউএস বাংলাকে প্রাথমিকভাবে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছে বেবিচক। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এয়ারলাইন্সকে জানানো হবে। কিন্তু লাভজনক রুট হবে কিনা, এ নিয়ে সমীক্ষা প্রয়োজন বলে মনে করছে এয়ারলাইনাসগুলো। তারা বলছে, বিশে^র কোন কোন দেশ থেকে সরাসরি কক্সবাজারে আসা-যাওয়ার জন্য যাত্রী মিলবে, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। কক্সবাজার একটি পর্যটননগরী, শুধু এটি বিবেচনায় রেখে বিশে^র বিভিন্ন গন্তব্য থেকে পর্যটক আসা-যাওয়া করবে তা ভাবা অমূলক। বাংলাদেশের আকাশপথে বড় বাজার মধ্যপ্রাচ্য। সেখান থেকে দিনে কী পরিমাণ যাত্রী কক্সবাজারে সরাসরি আসা-যাওয়ায় আগ্রহী, তাও মাথায় রাখা দরকার।
গত ৩০ জুলাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কক্সবাজার-কলকাতা রুটে ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়টি অবহিত করেন। একই দিন ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রতিষ্ঠানটিকে কক্সবাজার-ব্যাংকক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অনুরোধ করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। তবে গতকাল এয়ারলাইন্সটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানায়, সমীক্ষা ছাড়া ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব নয়। রুটটি লাভজনক হবে কিনা তা সর্বাগ্রে বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিসেবে বিমান লোকসান দিয়ে হলেও ফ্লাইট চালাতে পারে কিন্তু অন্য এয়ারলাইন্স যাত্রী না পেলে রাজি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।বেবিচক বলছে, কক্সবাজার বিমানবন্দরে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এক বছরে ১৩ হাজার ৩৬৮টি ফ্লাইট পরিচালনা হয়েছে; মোট যাত্রী ছিল ৬ লাখ ২৪ হাজার ২৪৫ জন। অর্থাৎ কক্সবাজার বিমানবন্দরে গড়ে প্রতিদিন যথাক্রমে ৩৭টি ফ্লাইট (আগমন ও প্রস্থান) এবং ১৭শ যাত্রী হ্যান্ডল করা হয়েছে। এ তথ্য দেখিয়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার চাহিদা বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করতে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সভা ও বন্দরটি পরিদর্শন করেছে সরকার। এরপর নির্মাণাধীন নতুন টার্মিনাল ভবনের নিচতলা সীমিত পরিসরে চালুকরণ, পুরনো টার্মিনাল ভবন পরিবর্ধন এবং বিদ্যমান রানওয়ের মাধ্যমে সীমিত পরিসরে আন্তর্জাতিক কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।