
স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ কিছু পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞায় দুই দেশের বাণিজ্যে নতুন করে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা ভারতের সিদ্ধান্তকে অশুল্ক বাধা হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, ভারতের এ সিদ্ধান্তে সে দেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি কমবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানিও প্রভাবিত হবে। ভারতে বাংলাদেশ রপ্তানি করে যে পরিমাণ আয় করে, তার বিপরীতে ভারতের রপ্তানি পাঁচ গুণ।গত শনিবার ভারত সব স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করার আদেশ জারি করে। এর বাইরে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের সব শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পানীয়, ফার্নিচার, প্লাস্টিক পণ্যসহ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এসব পণ্য পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়িয়া স্টেশন থেকেও রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়। ভারতের সিদ্ধান্তের পর ইতোমধ্যে কোনো কোনো স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে আটকে গেছে রপ্তানিমুখী পণ্যবাহী ট্রাক।
জানা গেছে, ভারত আমদানি নিষিদ্ধ করার পর বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রাণ গ্রুপের রপ্তানির ১৭ ট্রাক পণ্য পাঠানোর প্রক্রিয়া আটকে গেছে। এক কোটি টাকা মূল্যের এসব ফুড ড্রিংকস ও কনফেকশনারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে যাওয়ার কথা ছিল।জানতে চাইলে প্রাণ গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, দুপুরে পণ্যগুলো বুড়িমারী বন্দর দিয়ে ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। তবে স্থলবন্দর দিয়ে ভারত এসব পণ্য আমদানির যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তা জেনেছেন আগের রাতে। এখন পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ফেরত আনা ছাড়া উপায় নেই। অন্য কোনো পথ দিয়ে পণ্য পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন কিনা– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনও চিন্তা করা হয়নি।ভারতের আদেশে ভারতের সঙ্গে সাতটি স্থলবন্দরের মধ্যে ভোমরা ও সোনামসজিদের বিষয়ে কিছু বলা নেই। তবে সেভেন সিস্টার্সে এ দুই বন্দর দিয়ে পণ্য পাঠিয়ে লাভ নেই। এখন ১৭ ট্রাক পণ্য নিয়ে চিন্তা নয়। চিন্তা হচ্ছে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে। কারণ, ওই সাত রাজ্যে তাদের পাঁচ থেকে ছয় কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। সরকারকে তারা উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। কারণ এটি শুধু প্রাণ গ্রুপের সঙ্গে সমস্যা নয়, দেশের সমস্যা।
গত এপ্রিলে ভারত তৃতীয় দেশে উড়োজাহাজে রপ্তানি পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। একই মাসে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ভারত স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য নেওয়া বন্ধ করল। এ ধরনের পরিস্থিতি দুই দেশের বাণিজ্যে, এমনকি আঞ্চলিক বাণিজ্যে অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে পারস্পরিক নির্ভরতা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে উভয় দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং আন্তঃসীমান্ত সংযুক্তি এই অংশীদারিত্বকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে উভয় পক্ষের কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং তার পাল্টা প্রতিক্রিয়া গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিশেষত অশুল্ক বাধা আরোপের ফলে যে নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে, তা শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য নয়; আস্থার পরিবেশ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেও হুমকির মুখে ফেলছে।