
দুই মেয়াদ নয়, দু বারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না বলে সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগেই যদি কেউ পদ হারান, সেটা এক দিনের জন্য হলেও একবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন বলে গণ্য হবে। তিনি পরবর্তী সময়ে আরেকবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। সেবারও যদি সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগে পদ হারান, তা দু বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন গণ্য হবে। ঐকমত্য কমিশন সূত্র সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো দু বার এবং মেয়াদের ফারাক ধরতে পারেনি। বিএনপি বলছে, কেউ পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। এক মেয়াদ বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। জামায়াতেরও মত, দু বার নয়, দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।গত ২০ এপ্রিল বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন নতুন প্রস্তাব করে জীবনে তিনবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। তবে টানা দু বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না। দু বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর বিরতি দিয়ে তৃতীয় এবং শেষবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে। তবে এ প্রস্তাবেও একমত হয়নি বিএনপি।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, তাদের প্রস্তাব তিনবার, তিন মেয়াদ নয়। কমিশনের সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার k`বলেন, সুপারিশ করা হয়েছে টানা দু বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, দুই মেয়াদ নয়।সংবিধান সংস্কার কমিশনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি এবং সংসদের মেয়াদ নির্দিষ্ট থাকে। প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদ হয় না। আস্থা ভোটে হেরে বা অন্য কোনো কারণে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেও সংসদ বিলুপ্ত হয় না। সংসদীয় গণতন্ত্র চালু অবস্থায় বাংলাদেশ এক সংসদে একাধিক প্রধানমন্ত্রী পায়নি। তবে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় চতুর্থ সংসদে দু জন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেছেন।হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে চতুর্থ সংসদে ১৯৮৮ সালের ২৭ মার্চ থেকে পরের বছরের ১২ আগস্ট পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। ওই বছরের ১২ আগস্ট থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কাজী জাফর আহমেদ। নব্বইয়ের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থানে এরশাদের পতনের আগে সংসদ বিলুপ্ত করা হয়।
সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনের আগে ১৯৯১ সালের ২০ মার্চ রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন খালেদা জিয়া। দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের পর সেই দিন তিনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর ১৫ মার্চ তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন বিএনপির চেয়ারপারসন। চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হন ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর। কমিশনের সদস্যরা সুপারিশের ব্যাখ্যায় বলেছেন, খালেদা জিয়া ১০ বছর এক মাস দায়িত্বে থাকলেও তিনি চারবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।ভারতেরও স্বল্প সময়ের প্রধানমন্ত্রিত্বের উদহারণ রয়েছে। ১৯৯৬ সালের একাদশ লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩ আসনের ১৬১টি পেয়ে বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে অটল বিহারি বাজপেয়ির নেতৃত্বাধীন বিজেপি। দলটি সরকার গঠনের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে প্রয়োজনীয় ২৭২ আসন থেকে অনেক দূরে ছিল। তবে বৃহত্তম দলের নেতা হিসেবে ১৯৯৬ সালের ১৬ মে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন অটল বিহারি। সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে রাষ্ট্রপতি ১৫ দিন সময় দেন তাঁকে। ব্যর্থ হয়ে ১৩ দিনের মাথায় তিনি পদ ছাড়েন। ১৯৯৮ সালে দ্বাদশ লোকসভা নির্বাচনে বাজপেয়ির বিজেপি ১৮২ আসন পায়। অন্য দলের সঙ্গে জোট করে ওই বছরের ১৯ মার্চ দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন অটল বিহারি। তবে জোটসঙ্গীদের সমর্থন হারিয়ে পরের বছরের ১৭ এপ্রিল সংসদে আস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান তিনি। দু বারে তিনি ১৩ মাস ১৩ দিন প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন।