বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক চায় ভারতপঞ্চগড়ে কমেনি শীতের তীব্রতাস্থানীয় সরকারের নির্দলীয় নির্বাচন চায় ৭০% মানুষদ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাড়ছে দেশি-বিদেশি চাপটিকটক নিষিদ্ধ করল যুক্তরাষ্ট্র, কাল থেকে কার্যকর
No icon

সংস্কার বাস্তবায়ন নির্ভরশীল পরবর্তী সরকারের ওপর

রাষ্ট্র কাঠামোর খোলনলচে পাল্টে দিয়েছে সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা। তবে এ সংস্কার প্রস্তাব কতটুকু বাস্তবায়ন হবে- তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপর। বিশ্লেষকদের মতে, সংস্কার প্রস্তাব যত ভালোই হোক, তা বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ। কারণ এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদের প্রয়োজন হবে। প্রস্তাবগুলো সংসদে গ্রহণ করতে হবে। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা দুরূহ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে দল বা জোট ক্ষমতায় যাবে, তারা এসব প্রস্তাব কতটুকু গ্রহণ করবে, তার ওপর নির্ভর করছে কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবের সাফল্য।গত বুধবার চারটি সংস্কার কমিশনের প্রধান তাদের সুপারিশসংবলিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর সংস্কার প্রস্তাবগুলোর সারসংক্ষেপ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এসব সুপারিশমালা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করা হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংস্কারের ব্যাপারে ছাত্র-উপদেষ্টাদের মতামত দেওয়ার অধিকার নেই। আবার অন্য দলগুলোও বলেছে, সংস্কার প্রস্তাব যত ভালোই হোক সেটা বাস্তবায়ন করার এখতিয়ার একমাত্র নির্বাচিত সরকারের। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, সংস্কার প্রস্তাবে বেশি সময় পার না করে দ্রুত একটি অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

চার সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেগুলো কেমন হয়েছে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, দেশের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাবগুলো করা হয়েছে। এরই মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উঠে এসেছে। সংবিধানের মৌলিক অংশে পরিবর্তনের বিষয়গুলো এরই মধ্যে জানা গেছে। এখানে দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত। তিনি বলেন, জেনেছি ফেব্রুয়ারি মাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই এরসভাপতি এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাবনাগুলো দিয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন নির্ভর করছে যেসব রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায় তাদের ওপর। কমিশন যে প্রস্তাবই দিক, তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব আগামী সরকারের হাতে। নির্বাচনের আগে দলগুলোর ম্যানিফেস্টু দেখলেই বোঝা যাবে কতটুকু তারা গ্রহণ করেছে।সংস্কার প্রস্তাব প্রসঙ্গে দুদকের সাবেক মহাপরিচালক মঈদুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের দাখিল করা প্রতিবেদন বেশ ভালো মনে হয়েছে। এখানে ন্যায়পাল, বেসরকারি পর্যায়ের দুর্নীতি রোধে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এগুলো ভালো সুপারিশ। তবে দুদক আইন সংস্কারের প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া আদালতের যে সুপারিশ করা হয়েছে, এই আদালত প্রত্যেক জেলাতেই এখন আছে। সেখানে অন্য মামলার পাশাপাশি দুদকের মামলা নিষ্পত্তি হয়, যার হার মাত্র ৯ শতাংশ। তাই দুদকের মামলা নিষ্পত্তিতে পৃথক আদালত প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, এই সুপারিশ নিয়ে সরকার ও দুদকের কিছু করণীয় আছে। দুদক যে আইনের কথা, নীতির কথা বলে সেভাবে কাজ করতে হবে। সরকার ও দুদক আন্তরিক হলে সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ বলেন, তারা যে সংস্কারই করুক, পরবর্তী নির্বাচিত সংসদে এর অনুমোদন প্রয়োজন হবে। পরবর্তী সংসদ অনুমোদন না করলে এই সংস্কার বাস্তবায়ন হবে না। তাই আগে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে ঠিক করে নেওয়া দরকার ছিল।ইকতেদার আহমেদ জানান, ওয়ান-ইলেভেন সরকার ১২২টি অধ্যাদেশ করেছিল। এর মধ্যে পরের নির্বাচিত সরকার ৪৬টি আইনে পরিণত করেছে, ৭৮টি বাতিল করেছে। ৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের পর তিন জোটের রূপরেখা মেনে ৩৬টি কমিশন করা হয়েছিল, তাও কোনো কাজে আসেনি। আর এখন যারা এই সংস্কারের প্রস্তাব দিচ্ছে, তাদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন আছে।সংস্কার প্রস্তাব প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বুঝতে হবে সংস্কার করা জনপ্রতিনিধিদের কাজ। ছাত্র কিংবা উপদেষ্টাদের সংস্কারের ব্যাপারে মতামত দেওয়ার কোনো অধিকার নেই। ছাত্র-উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ওপর তাদের কোনো আস্থা নেই। তারা মনে করে, ইলেকশন দিলেই তো বিএনপি চলে আসবে। জনগণ যদি বিএনপিকে ভোট দেয়, এটা তো আমাদের দোষ না। তারাও পারলে জনপ্রিয়তা অর্জন করুক।