গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলছেই, নিহত আরও ৬১রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী এনজিও কর্মী নিহতএলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়লরেমিট্যান্স পাঠানোর তালিকায় শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্রদেড় লাখ বছর পর দেখা ধূমকেতু
No icon

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও ছুটি বাতিলের পরামর্শ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও সরকারি ছুটি বাতিলের পরামর্শ দিয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, ১৫ আগস্ট জমায়েত হলে শেখ হাসিনার দলকে প্রতিহত করবে অভ্যুত্থানকারীরা। আলাদা বৈঠক থেকে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিও উঠেছে।স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের যে পরামর্শ দিয়েছেন, তা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেছে দলগুলো। উপদেষ্টাদের কথা কম বলে দ্রুততম সময়ে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ সম্পন্নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একটি দলের সূত্র জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা পরিষ্কার করেছেন, তিনি ২০০৮ সালের মতো এবারও ক্ষমতা নিতে আগ্রহী ছিলেন না। শিক্ষার্থীর অনুরোধে এসেছেন। ছাত্র-জনতার কাঙ্ক্ষিত সংস্কার সম্পন্ন করার আগে নির্বাচনের চাপ দিলে তিনি দায়িত্বে থাকতে চান না।গতকাল সোমবার বিকেল ৪টায় যমুনায় ড. ইউনূস বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে আলোচনা শুরু করেন। এরপর একে একে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, বিজেপি, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এনডিএম নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন হয়। তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানিয়ে মৌন মিছিল করতে বলেছেন এমন একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। এ নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।আওয়ামী লীগ সেদিন জমায়েত হয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করবে বলে ধারণা থেকে অভ্যুত্থানে শরিক রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, ছাত্র-জনতার বিজয় নস্যাতের চক্রান্ত চলছে। এ পরিস্থিতিতে গতকাল ড. ইউনূস ১৫ আগস্টের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চান। একমাত্র বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ ১৫ আগস্ট পালনের পক্ষে মত দেন। তিনি বলেছেন, ১৫ আগস্ট সর্বজনীন। যতটুকু শ্রদ্ধা পাওয়া উচিত, ততটুকু শ্রদ্ধাই যেন পায়। উপদেষ্টাদের রাজনৈতিক বক্তব্য থেকে বিরত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানসহ নানা ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আলোচনা করেন বিএনপি নেতারা। সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মূল দাবি রাষ্ট্র সংস্কারকে প্রাধান্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নিজস্ব এজেন্ডায় ১৫ আগস্টে জাতীয় শোক দিবস পালন এবং সরকারি ছুটি ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। নতুন করে রাষ্ট্র বিনির্মাণে দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাঠামোকে সংস্কার, আইনের শাসন এবং জনগণের অধিকারের দিকে মনোযোগী হতে সরকারপ্রধানকে পরামর্শ দেয় বিএনপি। বৈঠকে বিএনপি নেতারা জানান, পরাজিত শক্তি দেশি-বিদেশি দোসর নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সংখ্যালঘুদের নিয়ে নানা গুজব ছড়াচ্ছে। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত চেষ্টায় সংখ্যালঘুর সম্পদ, মন্দির রক্ষা করা হয়েছে। কেউ যাতে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, কঠোরভাবে দুষ্কৃতকারী দমন করতে হবে।বৈঠকে ভারতের অবস্থান নিয়েও আলোচনা করেন বিএনপি নেতারা। সেখানে বলা হয়, ভারত আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বাইরে যেতে পারছে না। কূটনৈতিক তৎপরতায় এ বিষয়ে ভারতকে অবহিত করার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি।শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতারা দখল, লুটপাটে জড়াচ্ছে এ প্রসঙ্গও উঠে আসে বৈঠকে। বিএনপি নেতারা ড. ইউনূসকে জানান, সতর্ক করার পাশাপাশি দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, পালিয়ে ভারত গিয়ে জনগণের বিজয়কে নস্যাতের চক্রান্ত করছেন শেখ হাসিনা। সংখ্যালঘুসহ সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতনের গল্প ফেঁদেছেন। খুব দুর্ভাগ্যজনক, এত হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়নের পরও আওয়ামী লীগ নানা রকম কথা বলছে, যা বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার অবশ্যই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলবে; কিন্তু কোনো হত্যাকারীর সঙ্গে নয়। যারা ছাত্র, শিশু, রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করেছে, জনগণ তাদের বিরুদ্ধে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করা প্রত্যেক দেশপ্রেমিকের কর্তব্য। এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন নিয়ে কথা বলিনি। আগেও বলেছি, নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সময় লাগবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সেটুকু সময় অবশ্যই দিতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, জনগণের নিরাপত্তাকে অক্ষুণ্ন রাখতে সরকারকে পুরোপুরি সহযোগিতা করছি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কী কী করা যায় তা প্রধান উপদেষ্টাকে বলা হয়েছে। সরকার কী কী করতে চায়, বিএনপিকে জানিয়েছেন তিনি।
বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও সেলিমা রহমান।