বর্তমানের ফাইভজি, ওয়াইফাই, বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইসের কারণে মৃত্যু হার বাড়ছে দ্রুত গতিতে। এমনকি ঘুমের সময় পাশে নিয়ে রাখা ডিভাইসটি মস্তিষ্কের প্রতিনিয়ত ক্ষতি করছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, দুশ্চিন্তা, কাজের চাপ আর ফোন নিয়ে অনেকের দিন কাটে। এমন অবস্থায় স্লিপ টেক্সটিং ঘটতে পারে। এতে মানুষের ঘুমের অনীহা বাড়ে। অন্যদিকে স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারে ব্যস্ত থেকে অনেকেই রাস্তা পারাপার থেকে শুরু করে অনেক কাজ করে থাকেন। অনেকেই ট্রেন লাইনে হাঁটছেন, তাই এভাবেও মৃত্যু হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে।অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মৃত্যু হার বৃদ্ধির পেছনে গাড়ির চালকদের স্মার্ট ফোনে টেক্সট পড়া এবং ডিভাইস ব্যবহারকে দায়ী করা হচ্ছে। কারণ ২০১৩ সাল থেকে ৩১ শতাংশ সড়কে মৃত্যু এই কারণে হয়ে থাকে। তবে এই সংখ্যাটা ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ছিল ৫১ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার ফুটপাতে হাঁটার সময় স্মার্ট ডিভাইসে মৃত্যু হয়েছে এক বছরেই ২০ শতাংশ। অনেক সময় দেখা যায় অনেকে ফোন ব্যবহার করতে করতেই রাস্তা পার হচ্ছে, সেখানে রাস্তার গাড়ি, বাস এমনকি মোটরবাইককে পাত্তাই দিচ্ছে না। তাই অনেক সময় খামখেয়ালিপনার জন্য সড়কেও দিন দিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা।স্মার্ট ডিভাইজের ক্ষতিকর দিক নিয়ে অনেক দিন ধরেই সোচ্চার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও এমপি অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। তিনি বলেন, প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করতে পারছে। কিন্তু এ পি জে আবুল কালামের একটা কথা আছে, প্রযুক্তি হলো দুই দিকে ধারালো অস্ত্র। বামে গেলেও কাটবে, ডানে গেলেও কাটবে। সঠিক ব্যবহার যেমন মঙ্গলজনক, তার অপব্যবহার কিন্তু অসম্ভব ক্ষতিকারক।
ডিভাইসের ইলেকট্রলাইটিক রেডিয়েশন মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। ছোট্ট পর্দায় এই যে মনোযোগ দিচ্ছে তাতে ঘাড়ে ব্যথা হচ্ছে, মাথাব্যথা হচ্ছে, চোখের দৃষ্টিশক্তি লোপ পাচ্ছে।তিনি মনে করেন, কোনো অবস্থাতেই একটানা ৪০-৪৫ মিনিটের বেশি ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না। তার মতে, মোবাইলের অপব্যবহারে শিশুদের মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু শিশু নয়, সব বয়সি মানুষের টিউমার, স্মৃতি ও দৃষ্টিশক্তি লোপসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক সময় মৃত্যুও হতে পারে। তাই মোবাইল ব্যবহারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, আমি তো মনে করি, এখন গবেষণার সময় এসেছে সিগারেট বেশি ক্ষতি করছে না মোবাইল ফোন বেশি ক্ষতি করছে। আমার মতে, মোবাইলের ক্ষতি সিগারেটের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। ফলে ডিভাইস ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে।২০০৭ সাল নাগাদ আইফোনের প্রকাশের পর, অনেকেই ডিভাইস এর সম্পূর্ণ ক্ষতিকর প্রভাবগুলো বুঝতে পারেনি। অ্যাপেলের স্মার্ট আইফোন ব্যবহারকে আড়ম্বরপূর্ণ মনে করত। কিন্তু এর আগেই অনেকে স্মার্ট ফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, স্মার্ট ফোন ব্যবহারে ঘাড় ব্যথা হতে পারে। কমতে পারে চোখের জ্যোতি। যুক্তরাজ্যের চক্ষু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে দৃষ্টি বৈকল্য সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে মায়োপিয়া বা ক্ষীণ দৃষ্টির সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা সাধারণত চোখ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রেখে তা ব্যবহার করেন। তবে, অনেকের ক্ষেত্রে এ দূরত্ব মাত্র ১৮ সেন্টিমিটার। এত কাছে ফোন ব্যবহারে চোখের ওপর চাপ পড়ে।