নিজেদের দাঈ ইলাল্লাহ হিসেবে উপস্থাপন করে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করার মাধ্যমে মানুষকে দ্বীন শেখানোর প্রত্যয়ে আত্মনিয়োগ করার জন্য আলেম সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
তিনি বলেছেন, ‘সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে আলেম সমাজকে তাদের দাওয়াতি মিশনে আপসহীন ও অবিচল থাকতে হবে।’বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাজধানীর মগবাজারস্থ আল ফালাহ মিলনায়তনে মাজলিসুল মুফাসসিরিন ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াত আয়োজিত সিরাতুন্নবী সা: উপলক্ষে ‘আদর্শ দাঈ গঠনে রাসূলুল্লাহ সা:-এর ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন অধ্যপক মাওলানা আ ন ম রশীদ আহমাদ মাদানীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরীনের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল আমীন। বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের উপদেষ্টা ডক্টর মাওলানা হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরীনের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নাসির উদ্দিন হেলালি। উপস্থিত ছিলেন মাজলিসুল মুফাসসিরীনের ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহ-সভাপতি মাওলানা আ ন ম মাইনুদ্দিন সিরাজী ও মুফতি মাসুদুর রহমান, বিদেশবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা সাদিকুর রহমান আজহারী ও মাওলানা আনম আতিকুর রহমান নোমানী প্রমুখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিশ্বনবী সা:-কে হেদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেছিলেন অন্যসব বাতিল দ্বীনের ওপর বিজয়ী করার জন্য। তাই আমাদের প্রত্যেকের ওপর দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা চালানো ফরজ বা অত্যাবশ্যক। এতে কোনো মতবিরোধ করার সুযোগ নেই। রাসূল সা: এই মহান দায়িত্ব সফল ও স্বার্থকভাবে পালন করে গেছেন। তিনি দাওয়াতে শাহাদাত আলান্নাস ও শাহাদাতে হক্বের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানাবিধ বাধা-প্রতিবন্ধতকা, হামলা ও অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। জিহাদে অবতীর্ণ হয়ে তার দান্দান মোবারক শহীদ হয়েছিল। এর বাইরে দাওয়াতই ছিল তার জীবনের মূখ্য। এই দাওয়াত দিতে গিয়েই তিনি ঘরে-বাইরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করার জন্য পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। তাকে কারাবাস এবং শেষ পর্যন্ত হিজরত করতে হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘রাসূল সা: মক্কী জীবনের দীর্ঘ ১৩ বছর লোক গঠনে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তার প্রধান কর্মসূচি ছিল মানুষের চরিত্র গঠন, আত্মগঠন, দাওয়াত সম্প্রসারণ, আকিদা ও দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন। তাই দ্বীনে হক্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আলেম সমাজকে রাসূল সা:-এর আদর্শ ও অনুসৃত নীতি গ্রহণ করে জীবনের সকল কর্ম সম্পাদন করতে হবে। তাফসির মাহফিল, ওয়াজ মাহফিল ও সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে মানুষকে দ্বীন শেখানোর প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এক্ষেত্রে বেশি বেশি দাঈ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। মূলত, দাঈদের মাধ্যমেই সমাজ-রাষ্ট্র সঠিক পথে চলার দিক নির্দেশনা পায়। আর কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সমাজের সকল স্তরে জাস্টিস প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালানো আলেম সমাজের অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য।’
তিনি কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় আলেমদেরকে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। প্রধান আলোচকের আলোচনায় অধ্যাপক নূরুল আমীন বলেন, ‘আলেম সমাজ উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান এবং নবী আ:-গণের উত্তরসূরী। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আলেমদেরকে এক অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন। তাই দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে তাদের ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই, বরং রাসূল সা: আদর্শ অনুসরণ করে দ্বীনে হক্ব প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মাওলানা আ ন ম রশীদ আহমদ মাদানী বলেন, ‘উম্মাহ, দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে আলেম সমাজ ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে সকল মতপার্থক্য ভুলে আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাহলেই ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।’
প্রেস বিজ্ঞপ্তি