দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদসহ যেসব প্রস্তাব চূড়ান্ত করল বিএনপিইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক যুদ্ধে রূপ নিচ্ছে: পুতিনগুমের সঙ্গে জড়িতরা রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না: প্রেস সচিব৫ দেশ ভ্রমণে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতাইসরায়েলি হামলায় লেবাননে একদিনে নিহত ৫৯
No icon

৩৩ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে দেশের অন্তত ১৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ৪টি সরকারি কলেজ ও ১০টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে ২৭টিতে ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলে দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নির্যাতনসহ নানা অপকর্মে অতিষ্ঠ ছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছাত্ররাজনীতি চালু থাকলে আবারও ক্যাম্পাসে একই অবস্থা তৈরি হতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের অনেকে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলছেন। 

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেগুলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (জাককানইবি), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে ডুয়েট ও জাককানইবি ছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতিও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া মেডিকেল কলেজগুলো হলো—ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতিও নিষিদ্ধ হয়েছে।

অন্তত চারটি সরকারি কলেজের প্রশাসনও ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এগুলো হলো— ইডেন মহিলা কলেজ, রাজশাহী কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ও বগুড়ার সান্তাহার সরকারি কলেজ। সান্তাহার কলেজে ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাজনীতিও নিষিদ্ধ হয়েছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ

রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাবিটি তুলনামূলক জোরালো ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে সিন্ডিকেটের এক সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির সমন্বয়কদের প্রায় সবাই গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামের একটি ছাত্রসংগঠনের নেতা ছিলেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের গণমাধ্যমে যে ৯ দফা দাবি ঘোষণা করেছিলেন, তার ৭ নম্বর দাবিটি ছিল, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ কার্যকর করা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার  বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি চাই না। আমাদের চাওয়া, ছাত্র সংসদভিত্তিক গঠনমূলক রাজনীতি।’

এদিকে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাগীব নাঈম বলছেন, শিক্ষার্থীদের রাজনীতিসচেতন হিসেবে গড়ে তুলতে অবশ্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন আছে। তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতির নামে দখলদারি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি বিরাজনৈতিকীকরণের চেষ্টা।