
আজ ১২ রবিউল আউয়াল। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদের (স.) জন্ম ও ওফাত দিবস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরা এই দিনটিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) হিসেবে পালন করে থাকেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, বেশি বেশি দরুদ পাঠ, দান-খয়রাতসহ নফল ইবাদতের মধ্য দিয়ে দিনটি অতিবাহিত করবেন। অনেকে এই দিনে নফল রোজা রাখেন।পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) শান্তিপূর্ণভাবে পালনের লক্ষ্যে সরকার সারাদেশে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আজ শনিবার রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহীর মতো প্রধান শহরগুলোতে সুষ্ঠু ও নিরাপদে জামাত ও শোভাযাত্রা নিশ্চিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।দিবসটি উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানসহ সারাদেশে ব্যাপক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে এই অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করা হয়।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) অনুপম জীবনাদর্শ, সর্বজনীন শিক্ষা ও সুন্নাহর অনুসরণ আজকের এ দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় বিশ্বে শান্তি, ন্যায় এবং কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে। ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে মহানবীর (সা.) সুমহান আদর্শ ও সুন্নাহ বিশ্ববাসীর জন্য উৎকৃষ্টতম অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এবং এর মধ্যেই মুসলমানদের জন্য অফুরন্ত কল্যাণ, সফলতা ও শান্তি নিহিত রয়েছে।এদিকে দিনটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার যুগ দূরীভূত করে ইসলাম কায়েমের মাধ্যমে সত্য, ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সমাজে অবহেলিত, নির্যাতিত, বঞ্চিত ও দুঃখী মানুষের সেবা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, পরমতসহিষ্ণুতা, দয়া ও ক্ষমার গুণ, শিশুদের প্রতি দায়িত্ব এবং নারী জাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় মহানবীর (সা.) আদর্শ অতুলনীয়। তাই তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে স্বীকৃত।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে এসেছিলেন তাওহিদের মহান বাণী নিয়ে। প্রচার করেছেন শান্তির ধর্ম ইসলাম। সৌদি আরবের মক্কা নগরের বিখ্যাত কুরাইশ বংশে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের একই দিনে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। তার বাবা আবদুল্লাহ ও মা আমিনা। জন্মের আগেই রাসুল (সা.) তার বাবাকে হারান, আর ছয় বছর বয়সে হারান মাকে। সমগ্র আরব জাহান যখন পৌত্তলিকতা ও অনাচারের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, সেই আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগে বিশ্বজগতের রহমতস্বরূপ আগমন ঘটে মুহাম্মদের (সা.)। বিনয়, সহিষ্ণুতা, দয়া ও সহমর্মিতাসহ সব মানবিক সদ্গুণের সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটেছিল তার মধ্যে। শ্রেষ্ঠ মানবিক গুণাবলির অধিকারী হিসেবে তিনি ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সর্বকালে সর্বজনস্বীকৃত।এদিকে দিনটি উপলক্ষে চট্টগ্রাম কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরিফে ৭২তম পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা হতে চট্টগ্রাম কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরিফে এ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মাহফিলে প্রধান মেহমান হিসেবে বক্তব্য দেন মোর্শেদে আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশের মহাসচিব প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবুল মনছুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাহফিলে আরও বক্তব্য দেন মুফতি মাওলানা কাজী মুহাম্মদ আনোয়ারুল আলম ছিদ্দিকী, প্রফেসর ড. জালাল আহমদ ও মাওলানা মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী ফয়সাল।