নাসার প্রধান বিজ্ঞানী বরখাস্তসাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসমনপুরায় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১৫নারী প্রকল্প কর্মকর্তাকে চেয়ার ছুড়ে মারা যুবদল নেতা মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম গ্রেপ্তার জামায়াত আমিরের সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ
No icon

রোজার সামাজিক গুরুত্ব

রোজা ইসলামের অন্যতম ফরজ বিধান। ইবাদত ও আমলের পাশাপাশি এর আছে সামাজিক গুরুত্ব। নিম্নে রোজার সামাজিক গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হলো—

১. আদর্শ সমাজ গঠন : আদর্শ সমাজ ও জাতি গঠনের উদ্দেশ্যে রোজা তার মহান শিক্ষা নিয়ে প্রতিবছর একবার করে বাধ্যতামূলক আগমন করে। ইসলাম প্রকৃতপক্ষে এই অতুলনীয় নিয়মটির প্রবর্তন করে অফুরন্ত পুণ্য ও অমূল্য ফলদানকারী একটি চিরহরিত্ বৃক্ষরোপণ করেছে।


এর ফলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আদর্শ নতুন সমাজ গড়ে ওঠে।
২. সদ্ব্যবহারের শিক্ষা : রমজান মাস পরসপর সহানুভূতি ও সদ্ব্যবহারের মাস। এ মাস সমাজে খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি সদ্ব্যবহারের শিক্ষা দেয়। মহানবী (সা.) বলেন, এ মাসে যারা দাস-দাসীদের কাজের বোঝা হালকা করে দেয়, আল্লাহ পাক তাদের ক্ষমা করে দেবেন এবং দোজখের আগুন থেকে নাজাত দান করবেন।


৩. বিপ্লবী শিক্ষা : রোজার সাহরি ও ইফতার হালাল রুজি দ্বারা করা, রোজা রেখে মিথ্যা কথা না বলা, পরনিন্দা ও গিবত না করা প্রভৃতি এই রোজাই শিক্ষা দিয়েছে। তা ছাড়া ‘আমি রোজাদার’-এ কথা বলে সর্বপ্রকার গোলযোগ থেকে দূরে থাকা যায়। পূর্ণ এক মাস আত্মশুদ্ধির ট্রেনিং নিয়ে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে। এটাই রোজার একটি বিপ্লবী শিক্ষা।


৪. ত্যাগের শিক্ষা : রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষ ত্যাগ ও তিতিক্ষার সাধনা করে। রোজার মাধ্যমে তাকে এক কঠিন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হয়। সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে সারা দিনের জন্য রোজা বা উপবাসের শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি এক অনন্য ত্যাগের শিক্ষা।

৫. সমবেদনা প্রকাশ : সিয়াম পালন করে বোঝা যায়, সমাজে যারা অভুক্ত তাদের দুঃখ-বেদনা। ধনিক শ্রেণি দরিদ্রের ক্ষুধা ও অনাহার যাতনার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করে।


ফলে দরিদ্রের প্রতি তাদের অন্তরে সহানুভূতি জাগ্রত হয়। এ জন্য মহানবী (সা.) রমজান মাসকে সমবেদনা ও সহমর্মিতার মাস বলে আখ্যায়িত করেছেন।
৬. সাম্য প্রতিষ্ঠা : সাওম সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এই সময় ধনী-নির্ধন সর্বস্তরের মানুষ এক কাতারে এসে শামিল হয়। একই নিয়তে, একই উদ্দেশ্যে যখন সবাই পানাহার, কামাচার ও ভোগ লালসা হতে বিরত থাকে, তখন অন্তরে প্রবাহিত হয় সাম্যের এক অনাবিল প্রবাহ।

৭. নিয়মানুবর্তিতার প্রশিক্ষণ : রমজান মানুষকে নিয়মানুবর্তিতার ওপর প্রতিষ্ঠিত করে এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়। এ মাসে যথাসময়ে সাহরি খাওয়া, যথাসময়ে ইফতার করা, যথাসময়ে তারাবির নামাজ আদায় প্রভৃতি মানুষকে নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা দেয়।

৮. বদভ্যাস দূরীকরণ : রমজান মাসে রোজাদার ব্যক্তি তার সব বদভ্যাস পরিহার করতে সচেষ্ট। এ মাসে তার মন থেকে হিংসা-বিদ্বেষ, অনুকরণ, রাগ, ষড়যন্ত্র, বাগবিতণ্ডা, কু-ধারণা, ঠাট্ট-বিদ্রূপ, সীমা লঙ্ঘন, জুলুম-নির্যাতন, পরনিন্দার মতো কতগুলো বদভ্যাস দূরীভূত হয়। বাকি ১১ মাস আল্লাহ পাকের সব আদেশ-নিষেধের আনুগত্যের অভ্যাস বান্দার মধ্যে গড়ে ওঠে।

৯. দৈহিক উপকারিতা : রোজার প্রায় সব বিধি-নিষেধই স্বাস্থ্য বিধিসম্মত।

অনেক জটিল রোগের উপশমে রোজা

১০. বিস্ময়কর সফল মাধ্যম : চিকিৎসকদের মতে, রোজা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীরের পরিপাক প্রক্রিয়ায় সুস্থতা বিধানে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। দেহযন্ত্রটি সচল রাখার জন্য অবশ্যই সার্ভিসিং করা এবং রেস্ট দেওয়ার প্রয়োজন হয়। বিশ্ববিখ্যাত ডাক্তার আর ক্যামফোর্ডের মতে, ‘সাওম হচ্ছে পরিপাক শক্তির শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।’ তাই একজন রোজাদার ব্যক্তির রোজা সুস্বাস্থ্যের জন্য একটি শক্তিশালী অস্ত্র।

১১. পরিচ্ছন্ন সামাজিক জীবন : সিয়াম সাধনাকারীর এক মাস সিয়াম পালনের মধ্য দিয়ে তার দেহমনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়। এ মাসে সব কু-অভ্যাস ও অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকে বলে সে পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।

১২. ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান হ্রাস : রমজান মানুষকে এ শিক্ষা দেয় যে আল্লাহর বান্দা হিসেবে প্রত্যেক মানুষ সমান। মানুষে মানুষে যে কোনো পার্থক্য নেই, তা ধনী-দরিদ্র-নির্বিশেষে সবার রোজা পালনের দ্বারা বুঝতে পারা যায়। সবাই একই সময়ে সাহরি খায়, একই সময়ে ইফতার করে, একই সময়ে তারাবির নামাজ পড়ে এবং রমজান শেষে ঈদের নামাজ আদায় করে। ফলে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে কোনোরূপ ব্যবধান থাকে না।

১৩. মানুষের ষড়রিপু দমন : রোজা শুধু পেটের রোজা নয়। চোখের রোজা, কানের রোজা, মুখের রোজা, হাত-পায়ের রোজা। এই রোজার অর্থ হচ্ছে চোখ সে সব কিছু দেখবে না, কান সে সব কিছু শুনবে না, মুখ সে সব কিছু বলবে না, অঙ্গ-প্রতঙ্গ সে সব কাজ করবে না—আল্লাহ তাআলা যেসব অপছন্দ করেন এবং যা কিছু করতে নিষেধ করেছেন।

১৪. সুস্থ বিবেকের বিকাশ : রোজা পালনে বান্দাকে বাধ্য করার মতো কোনো জাগতিক কর্তৃপক্ষ বর্তমান থাকে না। তা সত্ত্বেও সে গোপনে ও প্রকাশ্যে বিশ্বস্ততার সঙ্গে রোজা রাখে শুধু আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য। একটি সুস্থ বিবেকের বিকাশ ঘটানোর জন্য এর চেয়ে উত্তম পথ আর কিছু হতে পারে না।

১৫. ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সুদৃঢ় : সাওমের মাধ্যমে মানুষে মানুষে যে অধিকার রয়েছে তার বাস্তবতা প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি সমাজের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক হৃদ্যতা ও ভ্রাতৃত্ববোধকে সুদৃঢ় করে এবং তাদের মধ্যে কর্তব্য ও দায়িত্ববোধের অনুপ্রেরণা জোগায়।