গাজায় আরও ৫২ ফিলিস্তিনি নিহতবঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, কমতে পারে তাপমাত্রাদ্রুত নির্বাচনের চাপ বাড়ছেগাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত ৩২ভারতীয়দের জন্য ভিসা সীমিত করল বাংলাদেশ
No icon

যৌতুক উপহার নয়, যৌতুক ভিক্ষা

বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন। এ পবিত্র বন্ধন হচ্ছে- আল্লাহর হুকুম এবং হযরত মুহম্মদ (সা.)'র সুন্নাত। এ বন্ধন মানুষকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে। বর্তমান সময়ে এ বন্ধন কে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম বানিয়ে ফেলেছে এক ধরনের অসভ্য সমাজ। মানুষের মনুষ্যত্ব ও নীতি নৈতিকতা দিন দিন লোপ পাচ্ছে। যার ফলে, মানুষের অধঃপতন ও চারিত্রিক বিপর্যয় ঘটছে।

সামাজিক কুপ্রথা ও কুসংস্কার যৌতুক যৌতুকের অভিশাপে শতশত মা-বোন অকালে মৃতু্যর মুখে পতিত হচ্ছে। যৌতুককে ঘিরে প্রতি দিন-রাত ঘটছে নারী নির্যাতন আর নিপীড়নের বীভৎস চিত্র। শারীরিক মানসিক নির্যাতনের বলির পাঁঠা হচ্ছে নারীরা। নারী নির্যাতনের আর্তনাতে কাঁদছে পৃথিবীর আকাশ-বাতাস। মানুষ কতটা অমানবিক হলে কনে পক্ষ থেকে টাকা চায়, বুঝে আসে না। এটা সভ্য সমাজের কাজ নয়।

শিক্ষিত একজন আদর্শবান নারী হিসেবে গড়ে তুলতে একজন বাবা-মায়ের কত পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় হয় তা বলার অবকাশ রাখে না। বিবাহ দিতে গেলে মা-বাবার ওপর নেমে আসে বিশাল টাকার ঋণের বোঝা। ইসলাম নারী জাতিকে যতটুকু সম্মানের আসনে সমাসীন করেছেন; পৃথিবীতে আর কোনো ধর্ম নারী জাতিকে এভাবে সম্মানিত করেনি। অনেক ধর্ম নারীকে উলঙ্গ করে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছে; অথচ ছেলেরা পোশাক পরিধান করে শরীর আবৃত করে চলাফেরা করছে। যৌতুক প্রথার প্রধান কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে- অর্থলোভ ও সামাজিক দুর্নীতি।

ইসলামী শরিয়তে যৌতুকের কোনো অস্তিত্ব নেই; যৌতুক গ্রহীতাকে ইসলাম জালিম হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। প্রকৃত অর্থে- বিয়ে হলো একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে নিষ্পন্ন বৈধ বন্ধন ও সামাজিক চুক্তি। বৈধ বৈবাহিক বন্ধনকে ইসলাম উৎসাহিত করেছে। একজন ব্যক্তি তখনই বিয়ের বয়সী হবেন; যখন মানসিক, দৈহিক ও আর্থিকভাবে বৈবাহিক জীবন নির্বাহ করতে সমর্থ হবেন। 

যৌতুক প্রথার প্রাদুর্ভাবের কারণে হাজারো সংসার অকালে ভেঙে যাচ্ছে। কত নারী নিজেদের পরিবারকে বাঁচাতে হাসিমুখে মৃতু্যবরণ করছে, কত নিষ্পাপ শিশু অকালে মা হারাচ্ছে, কত মা-বাবা অকালে মেয়ে হারাচ্ছে তা আসলেই আমাদের ভাবা উচিত, কত নারী নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করছে, কত নারী গাড়ি বা ট্রেনের নিচে পড়ে স্বেচ্ছায় মৃতু্যবরণ করছে, কত নারী অবুঝ ছেলে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করছে; এ দৃশ্যগুলো গা শিউরে ওঠার মতো।

এ নির্মম দৃশ্যপট প্রতিদিন ভেসে আসছে পত্রপত্রিকার নিউজে ও টিভির পর্দায়। আজ আমরা যৌতুক নিচ্ছি; কাল বোনের কিংবা নিকটাত্মীয়দের বিয়েতে ছেলে পক্ষকে যৌতুক দিচ্ছি। অর্থাৎ, যে-ই লাউ সে কদু।

মানুষের মাঝে দানব বা হিংস্র প্রাণীর বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান হলে বুঝতে হবে; এরা নষ্ট জন্মের ফসল। এরা উর্বর মাটিতে বিনা ইনভেস্টে ফসল বুনতে চায়। অথচ এরা স্ত্রীকে সঠিকভাবে দেনমোহর প্রদেয় করে না। স্ত্রীকে ন্যায্য অধিকার দেয় না। ইসলাম, স্ত্রীকে স্বামীর কাছে আমানত হিসেবে ন্যস্ত করেছে; গোলাম বা দাসি হিসেবে নয়। যারা স্ত্রীকে আমানত হিসেবে না দেখে চাকরানি হিসেবে দেখে এরা ইসলামের শত্রম্ন এবং প্রকৃত মুনাফিক।

মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্মস্তরে অবস্থান করবে। মামলা-হামলা দিয়ে যৌতুক বন্ধ করা যাবে না। মানুষের শুভ বুদ্ধির উদয় না হলে এবং মনুষ্যত্ব ফিরে না এলে যৌতুক প্রথা বন্ধ হবে না। কবি কাজী নজরুল তার নারী নামক কবিতায় লিখেছেন।