প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেনগরমের তীব্রতা কমাতে কী কাজ করেছেন, জানালেন হিট অফিসারবিনা ভোটে নির্বাচিত ৩৩ প্রার্থীসব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেনে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়েতাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রির বেশি যেসব অঞ্চলে
No icon

ধূমপান করেও তাজা থাকবে শরীর!

বহু আগে তৈরি হয়েও কেন বাজারে এল না স্বাস্থ্যকর সিগারেট? বহু সংস্থাই স্বাস্থ্যকর সিগারেট বানানোর চেষ্টা করেছিল। বেশির ভাগই সফল হয়নি। অনেকে আবার এই ধরনের সিগারেট বানানোর কথা দাবি করেও তা বাজারে আনতে পারেনি। ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক এই বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ সত্ত্বেও সুখটান নিতে পিছপা হন না অনেকেই। সুখটান নেব, আবার শরীরেরও বারোটা বাজবে না, এমনটা যদি হত! তা হলে বোধহয় সুখটান সত্যিই সুখের হত। এমন কোনও সিগারেট কি বানানো যেতে পারে না, যা ঠোঁটে ঠেকিয়ে টান নিলেও কোনও রোগই শরীরে বাসা বাঁধবে না! এই চেষ্টার কম কসুর করেননি সিগারেট নির্মাতারা। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও চেষ্টাই সফল হয়নি। বহু সংস্থাই জনস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্যকর সিগারেট তৈরির চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু তারা কেউই সফল হয়নি। ষাটের দশকেই স্বাস্থ্যকর সিগারেটের হদিস পাওয়া গিয়েছিল। অন্তত এমনটাই দাবি করা হয়েছিল। ১৯৬৬ সালে এক ধরনের স্বাস্থ্যকর সিগারেট বানিয়েছিল ব্রাউন অ্যান্ড উইলিয়ামসন টোব্যাকো কর্প নামে একটি সংস্থা। যার কোড নাম দেওয়া হয়েছিল এরিয়েল। ওই সংস্থার নথি পেয়েছে বলে দাবি করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। সেই নথি অনুযায়ী তারা জানিয়েছে, ১৯৬৬ সালে ওই স্বাস্থ্যকর সিগারেট তৈরি করা হয়েছিল। তবে ওই সিগারেট কখনই বাজারে আত্মপ্রকাশ করেনি। তামাক পোড়ানোর পরিবর্তে তাপ দেওয়া হবে স্বাস্থ্যকর সিগারেট তৈরির নেপথ্যে সেই সময় এমন ভাবনাই ছিল ওই সংস্থার। সংস্থার নথি উল্লেখ করে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ধূমপানের কারণে ক্যানসার যাতে না হয়, সে জন্য সিগারেটের অনেক উপাদানই বাদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জনস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে এত চেষ্টা চালিয়েও নিজেদের তৈরি ওই স্বাস্থ্যকর সিগারেট বাজারে নিয়ে যায়নি ওই সংস্থা। ফলে ওই স্বাস্থ্যকর সিগারেট দিয়ে কেউই সুখটান দিতে পারেননি। ওই সংস্থা আরও অনেক জিনিস বানাত। স্বাস্থ্যকর সিগারেট বাজারে আনলে তাদের তৈরি অন্য সামগ্রীর বিক্রি ধাক্কা খেতে পারে, এই আশঙ্কায় ভুগছিল ওই সংস্থা। আর সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে তারা। সংস্থার নথিতে আরও এক কারণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই স্বাস্থ্যকর সিগারেটে সুখটান দিলে ধূমপায়ীরা খুব একটা সুখ হয়তো পাবেন না। কারণ সিগারেটটিকে স্বাস্থ্যকর করতে স্বাভাবিক সিগারেটের অনেক উপাদানই বাদ দেওয়া হয়েছিল। ফলে ওই সিগারেট কতটা সুখটান দিতে পারবে, এ নিয়ে ধন্দে ছিল সংস্থা। পছন্দ না হওয়ার কারণে যদি এই স্বাস্থ্যকর সিগারেট না কেনেন কেউ! এমনই আশঙ্কা ছিল ওই সংস্থার। যদিও ওই সংস্থার তরফে এ নিয়ে টুঁ শব্দ করা হয়নি। তবে তাদের নথি যে ভাবে প্রকাশ্যে এসেছে, এ নিয়ে সরব হয়েছে ওই সংস্থা। ব্রাউন অ্যান্ড উইলিয়ামসন-এর মুখপাত্র থমাস ফিটজেরাল্ড জানিয়েছেন, তাঁদের সংস্থায় এক জন কাজ করতেন, সেই ব্যক্তিই নথি চুরি করেছেন। চুরি করা তথ্য যে ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা বেআইনি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। কিন্তু স্বাস্থ্যকর সিগারেট কেন বাজারে আনা হল না, সে নিয়ে মুখ খোলেননি মুখপাত্র। এর আগেও এ নিয়ে অনেক চেষ্টা চলেছে। পঞ্চাশের দশকে প্রথম বার স্বাস্থ্যকর সিগারেট তৈরি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল। সেই সময় এক ধরনের ফিল্টার সিগারেট তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু আদতে এই ফিল্টার সিগারেট কতটা স্বাস্থ্যকর ছিল, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল। সাধারণ সিগারেটে যে পরিমাণ নিকোটিন এবং টার থাকে, ফিল্টার সিগারেট-এর ক্ষেত্রে বরং তা বেশি পরিমাণে থাকে বলে সেই সময় দাবি করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে আরও একটি নতুন সিগারেট বানিয়েছিল ব্রাউন অ্যান্ড উইলিয়ামসন। ওই সিগারেট থেকে অনেক রাসায়নিক উপাদান বাদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২ বছরের মধ্যেই সেই নতুন সিগারেট বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৭ সালে ইম্পেরিয়াল গাল্লাহের রথম্যানস নামে কয়েকটি ব্রিটিশ সংস্থা একাধিক সিগারেট তৈরি করেছিল। তামাকের বিকল্প দিয়ে ওই সিগারেটগুলি বানানো হয়েছিল বলে দাবি করেছিল ওই সংস্থাগুলি। কিন্তু, স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, ওই সিগারেটগুলি মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। এর জেরে কয়েক মাসের মধ্যেই ওই সিগারেটগুলি বাজার থেকে হারিয়ে যায়। আমেরিকার সংস্থা লিগ্যাট অ্যান্ড মায়ার্স-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অফ রিসার্চ থমাস মল্ড এবং তাঁর সহকর্মীরা মিলে এক বার স্বাস্থ্যকর সিগারেট তৈরির দাবি করেছিলেন। ১৯৭৯ সালে বাজারে নিয়ে আসার জন্য তোড়জোড়ও শুরু হয়েছিল। কিন্তু আইনজীবীদের পরামর্শে সংস্থার এগজিকিউটিভরা পিছু হটেন। এত বিপত্তির পরও স্বাস্থ্যকর সিগারেট তৈরির ঝুঁকি নিয়েছিল আরও একটি সংস্থা। যার নাম আরজেআর। ১৯৮৮ সালে এক ধরনের সিগারেট বানিয়েছিল ওই সংস্থা। যার নাম দেওয়া হয়েছিল প্রিমিয়ার। যা ধোঁয়াহীন সিগারেট ছিল। এই সিগারেটে টান দিলে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কম বলে দাবি করা হয়েছিল। এই সিগারেট তৈরির জন্য সেই সময় ৮০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় যা ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি) খরচ করেছিল ওই সংস্থা। যার জেরে আর্থিক ভাবে অনেকটাই ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছিল সংস্থা। কিন্তু এই সিগারেটটির গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।

তবে এই সিগারেট সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছিল গ্রাহকদের কাছে। অনেক ধূমপায়ী এই সিগারেটের স্বাদ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। কেউ বলেছিলেন, এই সিগারেটের স্বাদ অনেকটা কয়লার মতো। অনেকেই কেনার পর এই সিগারেট ফেলে দেন। ফলে ধাক্কা খায় ব্যবসা। এক বছর যেতে না যেতেই ১৯৮৯ সালে ওই সিগারেটটি বাজার থেকে তুলে নেয় আরজেআর। ওই বছর আরও একটি নিকোটিন মুক্ত সিগারেট তৈরি করা হয়েছিল। যার নাম দেওয়া হয়েছিল নেক্সট। তবে সেই সিগারেটটিও তুলে নেওয়া হয়েছিল বাজার থেকে। এত বছর পরেও স্বাস্থ্যকর সিগারেটের হদিস মেলেনি বাজারে। আগামী দিনে কি আদৌ এমন সিগারেটে সুখটান দেওয়া সম্ভব হবে? সেই উত্তরেরই অপেক্ষায় ধূমপায়ীরা।