টানা এক বছর ধরে গুম হয়ে আছে গণতন্ত্র। জান্তার শাসনে অতিষ্ঠ মিয়ানমারের মানুষ। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে দেশ পরিচালনার ভার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে তারা সংঘবদ্ধ সংগ্রাম শুরু করেছে। সামরিক নিপীড়নের কারণে এসব সাধারণ মানুষ এখন অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে। এমনকি প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষও সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।সংঘাত পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা অ্যাকলেড বলছে, মিয়ানমারে সহিংস আক্রমণের পরিমাণ বাড়ছে, সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলাযুদ্ধে সম্মুখভাগে তরুণরাও নিজেদের জীবনবাজি রাখছেন। সামরিক সহিংসতার তীব্রতা ও ঘনত্ব বেড়েছে এবং জনতার প্রতিরোধ শিবির থেকে সংঘবদ্ধ পাল্টা আক্রমণের কারণে মিয়ানমার সত্যিকারের গৃহযুদ্ধে পড়ে গেছে। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত সরকারের প্রধান অং সান সু চি এবং তার মন্ত্রিসভার নেতাদের বন্দি করে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। এক বছরের এই যুদ্ধে কতজন নিহত হয়েছেন, সেই তথ্য যাচাই করা দুরূহ।তবে অ্যাকলেড বলছে, এই সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। আগস্ট থেকে সহিংসতা বেশ বেড়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থার প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই যুদ্ধকে এখন গৃহযুদ্ধ বলা যায়।
মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানিয়েছেন।আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংঘাত নিরসনে তাগিদ অনুভব করেনি বলে মনে করেন ব্যাচেলেট। সর্বনাশা এই সংকটের সমাধান না হলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাও হুমকিতে পড়বে বলে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন।মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যারা সশস্ত্র লড়াই করছেন, তাদের বলা হচ্ছে- পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)। এদের মধ্যে তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক (ইয়ং অ্যাডাল্ট, যাদের বয়স ১৮ বছর থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত) যোদ্ধার সংখ্যাই বেশি।এ রকমই একজন হীরা (ছদ্মনাম)। বয়স মাত্র ১৮ বছর। অভ্যুত্থানের পর বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার সময় সবে তিনি কলেজের পাঠ শেষ করেছেন। মেয়েটি এখন পিডিএফের প্লাটুন কমান্ডার হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ নিয়ে ভাবতে পারছেন না কিছুই। তার মা-বাবা শেষ পর্যন্ত বিষয়টি মেনেই নিয়েছেন।বিবিসি বলছে, পিডিএফে কৃষক আছেন, গৃহিণী আছেন। ডাক্তার আছেন, আছেন প্রকৌশলী। তাদের একটিই লক্ষ্য-, সামরিক বাহিনীকে টেনেহিঁচড়ে গদিচ্যুত করা।