ডেঙ্গুতে সারা দেশে চলতি বছর ঝরতে পারে ৪০ হাজার প্রাণ থাইল্যান্ডে ছয় দিনের সফর শেষে আজ দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রীহিট অ্যালার্টেও স্কুল, নগণ্য উপস্থিতির অনেকে অসুস্থদুর্নীতি ও লুটপাট লুকিয়ে রাখতেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে : রুহুল কবির রিজভীবাংলাদেশসহ ছয় দেশে সীমিত পরিমাণে পিঁয়াজ রপ্তানি করবে ভারত
No icon

নিয়ম মেনে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ না কি ব্রাঞ্চ?

আধুনিক যুগে খাওয়ার রকমফেরে অনেকেই আপন করে নিচ্ছেন ব্রাঞ্চ । কিন্তু এতে শরীরের ক্ষতি হচ্ছে না তো? পরামর্শে মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের সিনিয়র ডায়েটিশিয়ান পিয়ালি বিশ্বাস।

মিত্রবাড়িকে লোকে বলে নিয়ম বাড়ি । সেখানে অ্যালার্ম ঝাঁ ঝাঁ করে ওঠে ঘড়ির কাঁটা ছ'টা ছুঁলেই। মর্নিং ওয়াক সেরে এসে একটু বিশ্রাম নিয়েই আটটার মধ্যে এবাড়ির সকলে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়ে। নিয়ম মেনে ব্রেকফাস্ট। মাঝে ১১টায় ফল আবার ঘড়ি ১টা ছুঁলেই দুপুরের আহারাদি।
এমন আদর্শ খাবারের রুটিন দেখলে অনেকেই হাসেন। এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং, ব্রাঞ্চের যুগে এত নিয়ম মেনে ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ করা কি খুব দরকার? যদি সহজ এই উত্তর এককথায় চান, তাহলে বলতে হবে দরকার। সনাতন পদ্ধতিতে নিয়ম মেনে ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চের সত্যিই বিকল্প নেই।

কেন দরকার?
জীবনে সুস্থভাবে টিকে থাকতে গেলে নিত্য তিনটি মেজর মিল -এর উপর নির্ভর করতে হবে। বাকি তিনটি সাপ্লিমেন্টারি মিল । একজন সুস্থ পূর্ণবয়স্ক মানুষের পাকস্থলী একবারে যতটা খাবারে পূর্ণ হয়, তা হজম করতে পেটের সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। তাই প্রতি তিন ঘণ্টা অন্তর অল্প করে কিছু খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ব্রেকফাস্ট দিয়েই যেখানে দিনের খাবার খাওয়া শুরু, তাই এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সারারাত আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি, শরীর কোনও খাবার পায় না। শেষ খাবার পায় ডিনারে। তারপর ৭-৮ ঘণ্টা পেট কোনও খাবার পায় না। ফলে সকালের প্রথম খাবারটা তাকে দিতেই হয়, নইলে গ্যাস-অম্বল জনিত সমস্যা তৈরি হয়। যদি ব্রেকফাস্টের সময় পিছতে থাকে, তাহলে পেট খালি রেখে দেওয়ার সময়ও বাড়তে থাকবে। ব্রাঞ্চের সমস্যা এখানেই।

বহু বাড়িতে ব্রাঞ্চ কেন ব্রাত্য?
সাধারণত সকাল ১১টা-১১.৩০-এর আগে কেউই ব্রাঞ্চ করে না। ব্রাঞ্চ কথাটির অর্থ ব্রেকফাস্ট+লাঞ্চ। তাই এটি ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চের মাঝামাঝি একটি সময়ে খাওয়া হয়। এর প্রধান অসুবিধা হল রাত ৯টা বা ১০টার পরের খাবারটা পেটে ঢুকছে বেলা ১১.৩০-এ। প্রায় ১৪ ঘণ্টা পরে। এই সমস্যা অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদিকে ডেকে আনে। তাই ব্রাঞ্চের খুব একটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। শখ করে এক আধদিন চলতে পারে বড়জোর। অনেকেই আবার সকাল ৮টা-সাড়ে আটটায় ভরপেট খেয়ে অফিস রওনা দেন। সেটাই তাঁদের ব্রেকফাস্ট। এই খাবারটা ভাত হলেও ক্ষতি নেই। বরং অনেকক্ষণ কিছু খাওয়ার অবকাশ না পেলে দিনের প্রথম মিলটি পেট ভরে খেয়ে নেওয়ারই পরামর্শ দিই আমরা। এটি অনেকটা দীর্ঘযাত্রার আগে গাড়িতে সারাদিনের জন্য তেল ভরে নেওয়ার মতো ব্যাপার। এরপর বেলা ১১টা নাগাদ ফল ও দুপুর ৩টেয় একটি বা দু’টি রুটি খেতে পারেন। যদি শর্করা খেতে বেশি না চান, তাহলে উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ ওটস রাখতে পারেন তিনটে-সাড়ে তিনটের টিফিনে। কিন্তু রাত ৯টা-১০টায় খেয়ে ফের পরের দিন ১১.৩০ নাগাদ খাওয়া এটি খুব কাজের কথা নয়।

কিন্তু এ তো ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং!
এমন ধারণা অনেকেরই আছে। তাঁরা ভাবেন ডিনারের পর একেবারে ব্রাঞ্চ সারলে ১২-১৪ ঘণ্টা গ্যাপ তো মেলে। তাই এটা বোধহয় ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের কাজ করে। প্রথমেই বলি, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং যে খুব উপকারী, তা এখনও বলার সময় আসেনি। ডায়েটের ইতিহাসে এটি সবে শুরু হয়েছে। কিছু মানুষ এতে উপকার পাচ্ছেন, তবে সকলে নয়। অনেকে কিন্তু এই ফাস্টিং মানতে গিয়ে অসুস্থও হচ্ছেন। তাই একে খুব স্বাস্থ্যকর অভ্যেস এখনই বলা যাবে না। তাই সনাতনী পদ্ধতিতে সময় মেনে অল্প পরিমাণে খাওয়াদাওয়া করার দিকেই আমার ভোট।

তবু যদি ব্রাঞ্চ করি?
নিত্য ব্রাঞ্চ নয়। এটি এক-আধদিনের জন্য চলতে পারে।
ব্রাঞ্চ দিয়ে দিন শুরু হলে দিনের অন্যান্য খাবারে নির্দিষ্ট বিরতি মেনে চলুন। বাকি খাবার তিন ঘণ্টা অন্তর খেতে হবে।
সারাদিন খুব বেশি অনিয়ম করা যাবে না। খেতে হবে হাল্কা, তেলমশলা এড়িয়ে।