সংসদ-গণভোটের তপশিল ঘোষণায় প্রস্তুত ইসি একক প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করছে আন্দোলনরত আট দলচলতি সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে : এ. এম. এম. নাসির উদ্দিনদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়বেগম রোকেয়া দিবস আজ
No icon

সংসদ-গণভোটের তপশিল ঘোষণায় প্রস্তুত ইসি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তপশিল ঘোষণায় সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ বুধবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনসহ চার কমিশনার। একই সঙ্গে তপশিলের পূর্ণ বিবরণসহ সিইসির ভাষণের রেকর্ডও আজ করা হচ্ছে। জাতির উদ্দেশে এ ভাষণ আজ সন্ধ্যার পর প্রচারের কথা রয়েছে। কোনো কারণে আজ সম্ভব না হলে আগামীকাল তা প্রচার হবে বলে জানিয়েছেন ইসি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।এদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল তপশিল ঘোষণার পর অনুমতি ছাড়া সব ধরনের আন্দোলন-সমাবেশের আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।সরকারের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের ঘোষণা রয়েছে। সে অনুযায়ী তপশিল সাজানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তপশিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনী সভা-সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আচরণবিধি অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টা আগে সমাবেশের স্থান ও সময় পুলিশকে অবহিত করতে হবে। মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই, প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামার সুযোগ পাবেন। তপশিলের পরপরই মাঠে নামবেন পাঁচ শতাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

এ ছাড়া সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, তপশিলের পর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতোই গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পাবেন। এবার সশস্ত্র বাহিনীর নির্দিষ্ট সংখ্যক কর্মকর্তাও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। তপশিল ঘোষণার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরেছেন সিইসি। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। আজ রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দুপুরে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে বিকেলে ভাষণ রেকর্ডের প্রস্তুতি রয়েছে।দেশে এর আগে দুইবার গণভোট অনুষ্ঠিত হলেও প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হতে যাচ্ছে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে পোস্টাল ভোটিং যুক্ত হয়েছে এবং গণভোটও দিতে পারবেন নিবন্ধিত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।এবারের নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অর্ধশতাধিক দল অংশ নিচ্ছে। তবে নিবন্ধন স্থগিত থাকায় ভোটের বাইরে থাকতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ভোটে অংশ নিতে যাচ্ছে। তাদের একটি অংশ ইতোমধ্যে দল থেকে বেরিয়ে জাতীয় পার্টির (জেপি) সঙ্গে জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। চলতি সপ্তাহে সিইসির সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি। এসব দলের পক্ষ থেকে ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী তপশিল ও ভোটের পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে। তবে বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিয়ে জামায়াত ও এনসিপি তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছে ইসিকে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা নিয়ে অনিশ্চয়তার গুঞ্জন ছিল। তবে দলটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ইসিকে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে কমিশনের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।এবারের নির্বাচনে ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ ভোটারের জন্য ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র ও ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯ ভোটকক্ষ স্থাপন করা হচ্ছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭ এবং নারীদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ কক্ষ থাকছে। একটি ভোটকেন্দ্রে গড়ে তিন হাজার ভোটার থাকবে। আর প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে ৬০০ পুরুষ ভোটারের জন্য একটি এবং ৫০০ নারী ভোটারের জন্য একটি ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে।এ ছাড়া ৫০ লাখ প্রবাসী ভোটারকে প্রথমবারের মতো পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে ইসি। ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়ে প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধনের কাজ চলছে।

আন্দোলন-সমাবেশ থেকে বিরত থাকার আহ্বান

তপশিলের পর অনুমোদনহীন সমাবেশ, আন্দোলন করা থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে।এ বিষয়ে সতর্ক করে সরকার বলেছে, অনুমোদনহীন জনসমাবেশ, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন আন্দোলন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যারা বেআইনিভাবে সভা-সমাবেশে অংশ নেবেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।এতে বলা হয়, তপশিল ঘোষণার পর সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনী নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবে, যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।