
চলতি বছরের শেষ নাগাদ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার ঢাকায় জাপানি সম্প্রচার মাধ্যম এনএইচকে-কে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান তিনি। এ ছাড়া গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশ অস্থিতিশীল করতে চাইছেন বলে গতকাল বিবৃতিতে অভিমত প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় উত্তরণ প্রসঙ্গে জাপানি গণমাধ্যমকে ড. ইউনূস বলেন, নির্বাচন আয়োজনের সবচেয়ে সম্ভাব্য সময় হতে পারে চলতি বছরের শেষ ভাগ। যখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তখন যে নতুন সরকার নির্বাচিত হবে, তারা একটি স্থিতিশীল ও সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর কাজ করার সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, যে পরিস্থিতিতে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি, সে প্রেক্ষাপটে আমি মনে করি- আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। কারণ, এটি ছিল একেবারে বিধ্বস্ত একটি সমাজ, ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি, বিপর্যস্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা সবকিছুই ভেঙে পড়েছিল। আমি চাই বাংলাদেশ যেন স্থিতিশীল হয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।অপরদিকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো বিবৃতিতে ড. ইউনূস বলেন, গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নিয়ে তার দলীয় সন্ত্রাসীদের একত্র করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে চাইছেন। বাংলাদেশের পুনর্নির্মাণকে ক্রমাগত বাধাগ্রস্ত করতে চাইছেন। তবে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেশের সব নাগরিককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল হতে হবে। শেখ হাসিনার পরিবারের সম্পত্তি ধ্বংস এবং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় কিংবা অন্য কোনো অজুহাতে দেশের কোনো নাগরিকের ওপর আক্রমণ না করার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনা বছরের পর বছর জনগণের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। যারা শেখ হাসিনার নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাদের মনে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে সেটি অন্তর্বর্তী সরকার অনুধাবন করে। তা সত্ত্বেও সরকার দেশের সব নাগরিককে আইন মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছে। এতে আমরা নিজেদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব। ফ্যাসিবাদী শাসনের অধীনে পুরোনো বাংলাদেশ থেকে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করছি, আইন মেনে চলার মধ্য দিয়েই সেটি আলাদা হবে। আইনের প্রতি যে কোনো অবজ্ঞা নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।প্রফেসর ইউনূস বলেন, আমাদের নিজেদের এবং বিশ্বজুড়ে আমাদের বন্ধুদের কাছে প্রমাণ করা অপরিহার্য যে, আমরা একে অপরের নাগরিক ও মানবাধিকারকে সম্মান করি এবং আইন মেনে চলি। রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের বিজয়ীদের এমন কিছু করা উচিত হবে না, যা দেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং স্বৈরাচার হাসিনার আমলের সঙ্গে তুলনা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। সম্পত্তি ধ্বংস, ব্যক্তির ওপর আক্রমণ কিংবা কোনো ধরনের উসকানিমূলক কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অবিলম্বে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী যে কারও বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের নেতারা দেশকে সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে ফেলে গেছে। যতক্ষণ আমরা সতর্ক থাকব এবং নিজেদের নীতি-নৈতিকতা বজায় রাখব, ততক্ষণ তাদের ফিরে আসার সুযোগ নেই। তাদের সম্পত্তিতে যে কোনো আক্রমণকে তারা আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করার এবং তাদের বানোয়াট গল্প প্রচার করার সুযোগ হিসেবে নেবে। সমগ্র বিশ্ব আমাদের সঙ্গে আছে। এ মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলার যে কোনো অবনতি বিশ্বকে ভুল বার্তা দেবে।