মালয়েশিয়ার সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য চায় বাংলাদেশসড়ক দুর্ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিহতফের ১০ ডিগ্রির নিচে পঞ্চগড়ের তাপমাত্রাউদ্বোধনের পর এবার রেল প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধিউভয় সংকটে পুলিশ
No icon

ইসির ভাবনার কেন্দ্রে জাতীয় নির্বাচন

জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন একসঙ্গে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, আমাদের সামগ্রিক ফোকাস হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। তাই জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আর জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকলে অপরাপর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যাবে। গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির ১৪তম কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।বেশির ভাগ মানুষ চায় আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন- সম্প্রতি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদের এমন বক্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। জাতীয় নাগরিক কমিটিও স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার পক্ষে মত দেয়। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের পর স্থানীয় সরকার কাঠামো ভেঙে পড়ায় নাগরিকরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্তমানে দেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পরিস্থিতি আছে। এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে সরকার। আর বিএনপি নেতারা বলছেন, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন মানবেন না তারা। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চার নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিব উপস্থিত ছিলেন।সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বলেন, আমাদের সামগ্রিক ফোকাস জাতীয় নির্বাচন। কমিশন জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকলে অপরাপর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এমন কোনো ইভেন্ট আসা ঠিক হবে না যেটা জাতীয় নির্বাচনকে ব্যাহত করে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সরকার ও সব পক্ষ এগুলো বিবেচনা করে যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা বাস্তবায়ন করব। যদি সরকার মনে করে কিছু নির্বাচন আগে করাবে তাহলে সেভাবে করতে হবে। তবে আমাদের অবস্থান, সব নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব নয়। সব স্থানীয় নির্বাচনও একসঙ্গে করা যাবে না।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ পাঁচ মাস পার হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে দল ও নানা মহল সরকারকে চাপ সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ২০২৫ সালের শেষ দিকে বা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন করার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।আবুল ফজল বলেন, সম্প্রতি সিইসি সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, পত্র-পত্রিকায় দেখা যাচ্ছে কেউ কেউ একই সঙ্গে সব নির্বাচন বা সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে-বিপক্ষে মত দিচ্ছেন। কমিশন এ নিয়ে আলোচনা করেছে। কমিশনকে নির্বাচন করতে হবে। সভায় আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সব অনুবিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে যেটা বুঝতে পেরেছি- এটা আসলে বাস্তবসম্মত প্রস্তাব নয়, সম্ভবও নয়। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। যেহেতু এটা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে। আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে আলোচনা করেছি, যাতে আমাদের অবস্থানটা তুলে ধরতে পারি।সভা শেষে নির্বাচনে ইসির কর্মযজ্ঞ, প্রস্তুতির বিষয়ে কত সময় লাগতে পারে তার একটা ধারণা দেন এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, শুধু নির্বাচনটা নির্বাচন অনুষ্ঠান নয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাস্তবতা হচ্ছে, একটা সংস্কার কমিশন কাজ করছে। তাদের প্রস্তাব সামনে আসবে। এটাকে ধারণ করে আইন-বিধিমালায় কোনো সংশোধন দরকার হলে করতে একটা সময় লাগবে। দেশের আবহাওয়ার বিষয়ও বিবেচনায় নিতে হবে। জাতীয় নির্বাচন করতে হলে কমিশনকে কিছুটা সময় দিতে হবে। এর মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদের লক্ষ্যে ২০ জানুয়ারি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহের কাজও আনুষ্ঠনিকভাবে উদ্বোধন করবে ইসি।

সভায় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নাকি নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা উচিত সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কমিশন থেকে জানানো হয়েছে- জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগ নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে নিতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্ত ও আইনটি ছিল অসাংবিধানিক। তাই এনআইডি কার্যক্রম ইসির অধীনে রাখার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।আবুল ফজল বলেন, কমিশন সভায় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ও বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০ রহিত করে ২০২৩ সালে একটি আইন করা হয়। যদিও এটা কার্যকর হয়নি। গত কমিশনের সময় এ আইনটি বাতিলের জন্য একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর একটি ডিও (আধা সরকারি পত্র) লেটার দেওয়া হয়। আমরা আলোচনার পর সিদ্ধান্ত আকারে সরকারের সঙ্গে পত্রালাপে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।এক প্রশ্নে কমিশনের এ মুখপাত্র বলেন, এনআইডি ইসির অধীনে থাকুক এটা নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা কোনো অ্যানালাইসিসে যাচ্ছি না। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এনআইডি নিয়ে যাওয়া, এটা ইসির সাংবিধানিক সক্ষমতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সাংঘর্ষিক এ জন্য যে, সংবিধান বলে দিয়েছে ভোটার তালিকা প্রস্তুত, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। ২০০৭ সাল থেকে নির্বাচন কমিশন নিজে এটা ডেভেলপ করেছে। এ ডাটাবেজ থেকে ভোটার তালিকা ও এনআইডি হয়। শুধুমাত্র এনআইডি প্রিন্টের জন্য আরেক জায়গায় যাওয়াটা আমরা যৌক্তিক মনে করি না। আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে জনবল তৈরি করেছি। সক্ষমতা তৈরি হয়েছে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত। সুতরাং এটার ডুপ্লিকেশন হবে যদি এনআইডি নিয়ে যাওয়া হয়। তাই এটা অন্যত্র নিয়ে যাওয়া সঙ্গত হবে না। যেহেতু সেন্ট্রালি একটা ডাটা সেন্টার আছে। তাই এটার ডুপ্লিকেশনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।

আবুল ফজল আরও বলেন, বিশেষ এলাকায় (চট্টগ্রাম অঞ্চল) ভোটার নিবন্ধনের জন্য ফরম-২ এর ব্যবহার নিয়ে মাঠ পর্যায় থেকে আমাদের কাছে কিছু ফিডব্যাক এসেছিল, এ ফরম পূরণ করতে গিয়ে সাধারণ নাগরিকরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। এ কারণে সংশ্লিষ্ট উপ-কমিটিতে পাঠিয়ে সহজীকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একটি সিদ্ধান্ত হচ্ছে ক ক্যাটাগরির যারা ছিল তারা মোটামুটি নিশ্চিত যে বাংলাদেশি। তাই রিকোয়ারমেন্ট উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাকি যে ক্যাটাগরিগুলো আছে, সেগুলোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কমিটির মাধ্যমে আমাদের কাছে প্রস্তাবনা আসবে। এ ছাড়া দেশের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত ৫৬টি উপজেলায় রোহিঙ্গা এবং বিদেশি নাগরিকদের প্রতারণার মাধ্যমে ভোটার তালিকায় ঢুকে যাওয়ার প্রবণতা ঠেকাতে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা চলমান থাকবে।