হঠাৎ করেই আলোচনায় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন। তোড়জোড় শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ গোছাতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় দুটির শাখা ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শৃঙ্খলা ফেরাতে হিমশিম খাচ্ছে ঢাবি ও জাবি শাখা ছাত্রদল। ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) উপাচার্য। জাকসু নির্বাচনের জন্য গঠিত হয়েছে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন, প্রণীত হয়েছে নির্বাচনি রোডম্যাপ।জানা যায়, ৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট সভায় ডাকসু নির্বাচন দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ দাবির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা না করতে এবং দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে উপাচার্যের সঙ্গে বাগবিতন্ডায় জড়ান ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে চার নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে শাখা ছাত্রদল। ওইদিন রাতেই ছাত্রদলের এমন কর্মকান্ডের নিন্দা জানিয়ে এবং দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা উপাচার্যকে ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার জন্য ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান জানিয়েছেন, ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ চলমান রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে শাখা ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে শাখা ছাত্রদলের নেতারা। কারণ নবগঠিত কমিটির শতকরা ৬০ ভাগ নেতাই অছাত্র। আর এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে জয়ী হওয়ার মতো গ্রহণযোগ্যতা পাবে না ছাত্রদল। এজন্য এখনি নির্বাচন না দিয়ে ডাকসুর গঠনতন্ত্র ও সিন্ডিকেটের সংস্কার নিয়ে আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সময়ক্ষেপণ করতে চাইছে বলে অভিযোগ উঠেছে।তবে এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে আলটিমেটাম বেঁধে দিয়ে তাড়াহুড়ার পক্ষে আমরা নই। যৌক্তিক সময় নিয়ে সব স্টেকহোল্ডারের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে ডাকসুর গণতান্ত্রিক ও সুষ্ঠু সংস্কারের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ডাকসুর গঠনতন্ত্রসহ ছাত্রলীগের ফ্যাসিবাদী থাবা যেসব জায়গায় পড়েছে তা সমূলে উৎপাটিত করে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক সেন্টিমেন্টকে ধারণ করেই রাজনীতি করতে চায়।এদিকে, গত ৩১ ডিসেম্বর জাকসু নির্বাচন আয়োজনে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসন। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হবে নির্বাচনি তফসিল। জাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও জয় নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করেছে শাখা ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। জাকসু নির্বাচন টার্গেট করে নতুন কমিটি ঘোষণার তোড়জোড় শুরু করেছে শাখা ছাত্রদলও। কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নতুন কমিটি গঠনের দায়িত্ব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়াকে। কিন্তু নতুন কমিটি গঠন নিয়ে উভয়সংকটে পড়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। নতুন কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরা নাকি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসা ত্যাগী ও নির্যাতিতরা স্থান পাবে এ নিয়ে চলছে আলোচনা। রব উঠেছে জাকসু নির্বাচনের মাঠ ধরে রাখতে নিয়মিত ছাত্র দিয়ে গঠন করা হবে নতুন কমিটি। এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শাখা ছাত্রদলের শতাধিক নেতা-কর্মী। কমিটিতে ত্যাগী ও নির্যাতিতদের মূল্যায়নের দাবিতে গতকাল এই বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। মিছিল-পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ইতিহাস বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলকর্মী রায়হান হোসাইন বলেন, যারা জাকসু কেন্দ্র করে জাবি শাখা ছাত্রদলের জুনিয়র কমিটি চাচ্ছে তাদের বলতে চাই- জাকসু এবং জাবি শাখা ছাত্রদল দুটি স্বতন্ত্র সংগঠন। সে ক্ষেত্রে জাবি শাখা ছাত্রদল এবং জাকসু এক করা যাবে না। জাবি ছাত্রদলের কমিটি হতে হবে ত্যাগী এবং নির্যাতিতদের নিয়ে।