দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাস সরবরাহে সংকট চলছে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর শিল্পকারখানা ও বাসাবাড়িতে। তবে গত তিন দিন প্রচণ্ড শীতে বিশেষ করে বাসাবাড়িতে গ্যাসের সংকট তীব্র হয়েছে। বাসায় গ্যাস না থাকায় মানুষ রান্না করতে পারছে না। এমনকি অনেকে হোটেল-রেস্তোরাঁয় গ্যাস না থাকায়ও রান্না করা খাবার সংগ্রহ করতেও বিড়ম্বনায় পড়ছেন মানুষ। আবাসিক পাইপলাইনের গ্যাসের যখন এই সংকট চলছে, এ সুযোগে ডিলাররা গ্যাস সিলিন্ডারের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে গ্যাস সংকট নিয়ে মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। এ অবস্থায় তিতাসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আজ রবিবারের মধ্যে গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক হবে। তবে শিল্পকারখানা ও আবাসিকে সন্তোষ পর্যায়ে গ্যাস সরবরাহ এখনই সম্ভব হবে না।চাহিদা অনুযায়ী দেশীয় উৎস থেকে পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির মাধ্যমে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করা হয়। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত গ্যাস কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান দুটি টার্মিনালের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। তবে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত গ্যাস এবং আমদানিকৃত গ্যাসের সরবরাহের মাধ্যমে দেশের চাহিদার অর্ধেক গ্যাস সরবরাহে সক্ষম সরকার। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই দেশে গ্যাস সংকট চলছে। এমন সংকটের মধ্যেই এলএনজি টার্মিনাল সংস্কারের কারণে গত তিন দিন তীব্র গ্যাস সংকটে পড়েছে রাজধানী ও আশপাশের জেলাগুলো।
মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য এক্সিলারেট এনার্জি পরিচালিত এলএনজি টার্মিনাল ৭২ ঘণ্টার জন্য মেরামতে যায়। ফলে টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ ছিল। গত বুধবার থেকে টানা তিন দিন টার্মিনালটি মেরামত করা হয়। এতে গত কয়েক দিন সারাদেশে গ্যাসের সংকট প্রকট হয়। সাধারণত দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার গৃহিণী গোলাপী সাহারিন বলেন, পুরনো এলাকা ছেড়ে চলতি মাসের শুরুতেই সলিমুল্লাহ রোডের এই বাড়িতে উঠেছি। এসেই দেখি রান্নাঘরের চুলায় গ্যাস নেই। তিনি বলেন, আমার দুটো ছোট বাচ্চা। তাদের খাবার তৈরি করতে হয়, রান্না করতে হয়।মোহাম্মদপুর শেখেরটেক এলাকার স্কুলশিক্ষিকা সাবিহা মুমতাজ বলেন, সকালে বাচ্চাদের রান্না শেষ করে আমাকে স্কুলে যেতে হয়। কয়েক দিন ধরে একেবারেই গ্যাস নেই। ফলে চরম সংকটের মধ্যে পড়েছি। এমনকি হোটেল থেকে খাবার সংগ্রহ করতেও সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, গভীর রাতে গ্যাস আসলে অপেক্ষা করে রান্না করতে হয়। সামগ্রিকভাবে একটা কষ্টের মধ্যে পড়ে গেছি। তিনি বলেন, বছরের পর বছর গ্যাস সংকটের মধ্যেই আমরা আছি। তবে গত কয়েক দিন হঠাৎ অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে পড়েছে।
এদিকে শুধু মোহাম্মদপুর নয়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার একাধিক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, তাদের তিতাসের গ্যাস সরবরাহে প্রায়ই সমস্যা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে বনশ্রী, মিরপুর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, বাসাবো, পুরান ঢাকা, মগবাজার ও আজিমপুরের বাসিন্দাদের। গ্রাহকরা বলছেন, সবক্ষেত্রে অনিয়ম বিরাজ করছে। গ্রাহকরা ঠিকমতো গ্যাস না পেলেও মাস শেষে ঠিক বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে বোতলজাত সিলিন্ডার নিয়ে এখনও নিরাপদ পরিবহন ও ব্যবহার তৈরি হয়নি। প্রায়ই ঘটছে নানান দুর্ঘটনা। ফলে জ্বালানির প্রাপ্তি ও সংকট নিয়ে এক ভয়ের জীবন পার করতে হচ্ছে মানুষকে।এদিকে বিতরণ সংস্থা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহনেওয়াজ পারভেজ বলেন, গত কয়েক দিন ধরে গ্যাসের যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেটি মূলত এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। তিনি বলেন, দুটো এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটি টার্মিনাল মেরামত করার কারণে প্রতিদিন ৩৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ কমে যায়। তিনি বলেন, তবে শেষ খবর হচ্ছে টার্মিনালটি মেরামতকাজ শেষ হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। আগামীকাল (আজ রবিবার) থেকে গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা বাড়বে।কবে নাগাদ গ্রাহকের প্রত্যাশানুযাযী গ্যাসের সরবরাহ হবে জানতে চাইলে তিতাসের এমডি বলেন, তিতাসের আওতাধীন গ্রাহকদের প্রত্যাশানুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে তিতাসকে ২১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ করতে হবে। কার্যত সেটি মিলে না। তিতাস সর্বোচ্চ ১৪০০ মিলিয়ন থেকে ১৫০০ মিলিয়ন পেয়ে থাকে। গত তিন দিন সেটি ১২০০ থেকে ১৩০০ মিলিয়নে নেমে এসেছে। ফলে সংকট সমাধান করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, পেট্রোবাংলা থেকে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে না পারলে সংকট সমাধান করা যাবে না।