বৃষ্টির পর আগামী সপ্তাহে আবার তাপপ্রবাহের শঙ্কানারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সূচি ঘোষণা আজদেশের ৮ বিভাগে হতে পারে টানা বৃষ্টিবিশ্ব কাঁপছে বিক্ষোভেআপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চে বিচারকাজ চলবে আজ থেকে
No icon

বছর শুরুতেই বাড়তি বাড়িভাড়ার চাপ

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে ভোগাচ্ছে। গ্যাস, বিদ্যুতেও বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে বছরের শুরুতেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি। এর প্রধান ভুক্তভোগী ঢাকায় বসবাসকারী মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষ। বছরের শুরতেই বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির এই খড়্গ পড়েছে তাদের ওপর। এলাকাভেদে কোথাও এক হাজার, কোথাও দুই হাজার আবার কোথাও ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বেশির ভাগ মানুষের আয় বাড়েনি। ফলে বাড়তি ব্যয়ের চাপ নিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ঢাকার ভাড়া বাসায় বসবাসকারীরা। রিহ্যাবের পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকায় বসবাসকারীদের ৭০-৮০ শতাংশই ভাড়াটিয়া।একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আতিকুর রহমান পরিবার নিয়ে মিরপুর-১১ নম্বর এলাকায় দুই রুমের বাসায় থাকেন। গেল বছর তার বাসা ভাড়া ছিল ১৩ হাজার টাকা। এবার জানুয়ারির শুরুতেই সেই বাসা ভাড়া ২ হাজার টাকা বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া সার্ভিস চার্জ ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ তার কাছ থেকে মাসে ৩ হাজার টাকা বাড়তি নেওয়া হচ্ছে বছরের শুরুতেই। আতিকুরের আয় না বাড়ায় ৩ হাজার টাকা জোগান দিতে গিয়ে তাকে হিমশিম অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। একই অবস্থা বড় মগবাজার রেলগেট এলাকার বাসিন্দা মোক্তাদির হোসেনের। তিনিও দুই রুমের বাসায় থাকেন। বিদায়ী বছরে তার কাছ থেকে বাসা ভাড়া নেওয়া হতো ১৪ হাজার টাকা। জানুয়ারিতে ২ হাজার টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। বাড়তি ভাড়া তার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।

বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর এই হার মোহাম্মদপুর শেখেরটেক, আদাবর এলাকায়ও কম না। আদাবর ১৭ নম্বর রোডে থাকেন আজিবর মন্ডল। তিন রুমের বাসায় তার কাছ থেকে গত বছর নেওয়া হতো ২৩ হাজার টাকা। এবার সেই বাসার ভাড়া ২৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। বেড়েছে সার্ভিস চার্জও।বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির এই হার এলাকাভেদে ভিন্নতা রয়েছে। ভাড়া বেড়েছে বনশ্রী, খিলগাঁও, মগবাজার, যাত্রাবাড়ীসহ সব এলাকাতেই। কোথাও ২ হাজার, কোথাও ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে।ভাড়াটিয়াদের স্বার্থ রক্ষায় ১৯৯১ সালে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন করে সরকার। তবে সেই আইন কোন মন্ত্রণালয় বা কোন সংস্থা দেখভাল করবে সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। আইনে সরকার থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রতিটি এলাকার জন্য নিয়ন্ত্রক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যিনি ভাড়াটিয়া কিংবা বাড়িওয়ালাদের অভিযোগ শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করবেন। তবে গত ৩৩ বছরেও কোাথাও বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রক নিয়োগ দেওয়ার কথা শোনা যায়নি। ফলে বাড়িওয়ালারা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ান। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১-এ বলা আছে, কোনো বাড়ির ভাড়া মানসম্মত ভাড়া;র অধিক বৃদ্ধি করা হলে ওই অধিক ভাড়া, ভাড়ার চুক্তিতে ভিন্ন রকম কিছু থাকলেও আদায়যোগ্য হবে না। তবে মানসম্মত ভাড়া বলতে কত টাকা সেই বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই আইনে।

বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান  বলেন, ঢাকার ৮০ শতাংশই ভাড়াটিয়া। বিভিন্ন সময় নানা জরিপে সেটাই উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ভাড়াটিয়াদের জন্য একটি আইন রয়েছে। তবে সেই আইন কোন সংস্থা বা কোন মন্ত্রণালয় দেখভাল করবে তার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। তাই আইনটি যুগোপযোগী করা দরকার।প্রতিবছর জানুয়ারি মাস এলেই নতুন ভাড়ার চার্ট ধরিয়ে দেন বাড়ির মালিকরা। রাজধানীর বৃহৎ জনগোষ্ঠী ভাড়াটিয়া হলেও তাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মাথাব্যথা নেই নীতিনির্ধারণীদের। কাগজে-কলমে আইন থাকলেও তার সুফল কোনো ভাড়াটিয়া কোনো দিনই নিতে পারেনি। কারণ আইনে ভাড়াটিয়াদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো কথা নেই। আর বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কোন সংস্থা বাস্তবায়ন করবে, তারও সঠিক দিকনির্দেশনা নেই।