রাজধানীর বনানীর ৪৪ কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জমির ওপর বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেড যে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে, সেই ভবনের শেয়ারের অংশ একে-অপরের মধ্যে বুঝে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। উভয়পক্ষের আপসে নিষ্পত্তির ভিত্তিতে ভবনের ১৫ থেকে ২৮ তলার মালিকানা ডিএনসিসি এবং বোরাক রিয়েল এস্টেটের মধ্যে শেয়ার বণ্টনের বিষয়টি আদালতকে অবহিত করলে তা চূড়ান্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে পারস্পরিক প্রাপ্য হিস্যা অনুযায়ী শেয়ার বণ্টন ও দখল বুঝে নিতে বলেছেন আদালত। একই সঙ্গে এ বিষয়ে আগামী এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এবং আদালতের নির্দেশে এ সংক্রান্ত ডিএনসিসি এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রতিবেদন পেয়ে শুনানির পর গত মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৯ অক্টোবর সময় নির্ধারণ করেছেন।হাইকোর্টের গত মঙ্গলবারের এ নির্দেশের প্রেক্ষিতে শেয়ার বণ্টন কার্র্যক্রম শুরু করেছে ডিএনসিসি ও বোরাক রিয়েল এস্টেট। ডিএনসিসির ১৮ ও ১৯তম বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিএনসিসির প্রাপ্য ৪০ শতাংশ শেয়ার বুঝে নেওয়ার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ভবনটি সরেজমিন পরিদর্শনের কাজ সম্পন্ন করেছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট বিভাগের শুনানিতে ডিএনসিসির আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম নীলিম আদালতকে জানান যে, সিটি করপোরেশনের জায়গায় ইতোপূর্বে যত ভবন নির্মিত হয়েছে কোনোটিতেই ২২ শতাংশের বেশি সিটি কপোরেশন পায়নি। কেবল বোরাক থেকেই সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ভবনের প্রথমাংশের ৩০ শতাংশ এবং ওপরের ১৫ তলা থেকে ২৮ তলা পর্যন্ত ৪০ শতাংশ চুক্তিবদ্ধ হয়ে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ২৫ শতাংশ কমন এরিয়া যা সিটি করপোরেশনের অংশ বিবেচনায় আনুপাতিক হারে সিটি করপোরেশনের প্রাপ্য অংশ যথাক্রমে ৫৫ শতাংশ ও ৬৫ শতাংশ।আদালতকে এই আইনজীবী আরও বলেন, ভবনের কমন স্পেস, দোকানপাট- এসব মিলিয়ে গড়ে ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশের মালিকানা সিটি করপোরেশনের। তুলনামূলকভাবে এই চুক্তিতে আমরা সন্তুষ্ট। বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। শুনানিকালে রাজউকের আইনজীবী ইমাম হাসান উল্লেখ করেন যে, বনানীর ৪৪ কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে নির্মিত ভবনটির নকশা রাজউক থেকে পাস করা হয়নি। তৎপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুদ্দিন খালেদ আদালতকে জানান যে, সিটি করপোরেশনের নিজস্ব জমিতে ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ২০১৯ সালের ইমারত নির্মাণ আইন অনুযায়ী সরকার কর্তৃক অথরাইজড অফিসার হিসেবে নিয়োজিত। তিনি এই নকশা অনুমোদন করেছেন। তিনি আরও জানান যে, সিটি করপোরেশনের ঢাকার বনানী, গুলশান, মতিঝিলসহ অন্যান্য স্থানে যেসব নিজস্ব জমি রয়েছে সেগুলোতে ভবন নির্মাণের নকশাও অথরাইজড অফিসার হিসেবে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। ডিএনসিসির আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম নীলিম এবং বোরাকের আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেনও সিটি করপোরেশনের জমিতে ভবন নির্মাণে অথরাইজড অফিসার হিসেবে করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বের বিষয়টি আদালতে শুনানি চলাকালে সমর্থন করেন।