দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ বইছে, কিছু স্থানে বৃষ্টির আভাসযুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলবিএনপির আরও চার নেতাকে বহিষ্কারবিশ্বকাপে বাংলাদেশের দুই প্রস্তুতি ম্যাচের সূচি ঘোষণা রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ল রিলাক্স পরিবহনের বাস, নিহত ৫ আহত ১৫
No icon

সুলভ মূল্যের পণ্য যেন সোনার হরিণ

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে রিকশা চালিয়ে শ্যামলীর দিকে যাচ্ছিলেন মোজাম্মেল হক। পথে আদাবরে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের পাশেই ভ্রাম্যমাণ গাড়ির পেছনে ছোট জটলা দেখে থামলেন তিনি। গাড়ির গায়ে লেখা গরুর মাংস ৬৪০ টাকা কেজি। এর পর বিক্রেতার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে নিশ্চিত হলেন সত্যিই গরুর মাংস এ দামে বিক্রি হচ্ছে কিনা? পরে পকেটে হাত দিয়ে হতাশ হলেন এ রিকশাচালক। বিমর্ষ চেহারায় রিকশার প্যাডেল ঘোরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মাংস নিলেন না এমন প্রশ্নে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মোজ্জাম্মেল বলেন, সে সাধ্য কি আর আমাদের হবে? আলাপচারিতার এক পর্যায়ে গামছা দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে তিনি বলেন, কয়েক মাস ধরে মেয়েটা বলছে, গরুর মাংস খাবে। ও ক্লাস ফাইভে পড়ে। এখানে বাজারের চেয়ে দাম কম। কিন্তু ৬৪০ টাকায় কেনার সামর্থ্যও আমাদের নেই। আধা কেজি মাংস নিয়ে চারজনের সংসারে কার মুখে দেব?

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর ২০ স্থানে সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এখানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৪০ টাকায় (বাজারমূল্য কেজিপ্রতি ৭৫০ টাকা), খাসি প্রতি কেজি ৯৪০ টাকায় (বাজারমূল্য ১,১০০ টাকা), ড্রেসড ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ৩৪০ টাকায়, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকায় (৯০ টাকা) এবং ডিম প্রতি পিস ১০ টাকায় (বাজারে ১২ টাকা) কিনতে পারবেন। তবে গত বছর প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস ৮০০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার ২০০ টাকা, প্রতি লিটার দুধ ৬০ টাকা ও এক হালি ডিম ৩০ টাকায় বিক্রি করা হয়।গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বিক্রিয় কেন্দ্রে নিম্ন আয়ের মানুষের চেয়ে মধ্যবিত্তদের ভিড় বেশি। বাজারের চেয়ে দাম কম রাখা হলেও তাও সবার নাগালের বাইরে। অন্যদিকে, বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে নানা অব্যবস্থাপনা। নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয়নি বিক্রি। আবার এক জায়গায় ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র থাকার কথা থাকলেও ছিল অন্য জায়গায়। এসব তদারকি করতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরও মাঠে দেখা যায়নি।

মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশে ময়ূর ভিলার বিপরীতে সড়কে ভ্রাম্যমাণ বিক্রিয় কেন্দ্রে ক্রাচে ভর দিয়ে এসেছেন মজিবুল হক। উদ্দেশ্য কিছুটা কম মূল্যে মুরগি ও কিছু ডিম কেনা। প্রতি কেজি মুরগি ৩৪০ টাকা দেখে শুধু এক ডজন ডিম নিয়েই বাড়ি ফেরেন তিনি। তবে মজিবুল কেনার পর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ২৫ জনের ভাগ্যে তাও জোটেনি।রাজধানীর গ্রিন রোডে নিজস্ব বাড়ি আছে শহিদুল পাটোয়ারীর। তিনি ডিম কিনেছেন ৩০টি, গরুর মাংস ১ কেজি এবং মুরগির মাংস ১ কেজি। খাসির মাংস শেষ হয়ে যাওয়ায় আর কিনতে পারেননি।খামারবাড়ি বিক্রয় কেন্দ্রের ক্যাশিয়ার মোকাদ্দাস ইসলাম বলেন, আজকে ১৫৩ জন পণ্য ক্রয় করেছেন। আমরা ১০০ কেজি গরুর মাংস, ৭০ কেজি ড্রেসড ব্রয়লার মুরগি, ২ হাজার ২০০ ডিম, ২০০ লিটার দুধ এবং ৭ কেজি খাসির মাংস বিক্রি করেছি। কে ধনী কে গরিব, এটি তো আমরা বুঝতে পারি না। যাঁরা লাইনে দাঁড়ান, তাঁদের কাছেই পণ্য বিক্রি করি।