কোভিড মহামারী ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে সেই অস্থিরতার ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, রিজার্ভে টান ও ক্রমবর্ধমান বেকারত্বসহ নানা সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে সরকারকে। তাই এবারের বাজেটও হতে যাচ্ছে এসব মোকাবিলার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েই।সব ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ বাজেট উপস্থাপন করবেন। এবারের বাজেটের আকার চূড়ান্ত হয়েছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। অবশ্য অর্থনীতির খারাপ অবস্থার মধ্যেও জিডিপির উচ্চাশা থেকে সরে আসেনি সরকার। আগামী অর্থবছরে তাই জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেটের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন ।আগামী অর্থছরের মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। বাজেট তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, আগামী বাজেটের আকার সরকারের সাত লাখ কোটি টাকা করার ইচ্ছে ছিল; কিন্তু কোভিড-উত্তর পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এই অঙ্কে বাজেট নেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সম্প্রসারণমুখী বাজেট করা যাচ্ছে না।
আগামী বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যা ছিল তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। আর এনবিআরকে তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। চলতি বাজেট থেকে এটি ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি। এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে আদায় করা হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তি খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে তিন হাজার ২৭১ কোটি টাকা বিদেশি অনুদান পাওয়ার আশা অর্থমন্ত্রীর।আগামী বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, জিডিপির অংশ হিসেবে যা সাড়ে ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ছিল দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারকে বেশি নির্ভর করতে হবে ব্যাংক খাতের ওপর। এই খাত থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে এক লাখ ছয় হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৬৮ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৩৮ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্য আছে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৮৭ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের মধ্যে শুধু সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদই দিতে হবে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন ব্যয় তো আছেই।