দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ বইছে, কিছু স্থানে বৃষ্টির আভাসযুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলবিএনপির আরও চার নেতাকে বহিষ্কারবিশ্বকাপে বাংলাদেশের দুই প্রস্তুতি ম্যাচের সূচি ঘোষণা রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ল রিলাক্স পরিবহনের বাস, নিহত ৫ আহত ১৫
No icon

অস্বাভাবিক পরিবহন ব্যয় ঝুঁকি বাড়াচ্ছে রপ্তানিতে

পণ্য পরিবহনে জাহাজের ভাড়া বা শিপিং ব্যয় বহন করে রপ্তানি আদেশদাতা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু গত প্রায় এক বছরে এ ব্যয় দাঁড়িয়েছে তিন গুণ। জাহাজের সংকটও তৈরি হয়েছে। পরিবহনে অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধির কারণে রপ্তানিকারক এবং ক্রেতা উভয় পক্ষই ক্ষতির মুখে পড়েছে। পরিবহন ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো প্রতিবেশী বা নিকট দূরত্বের দেশ থেকে আমদানি বাড়িয়েছে। ফলে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রধান একক বাজার যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক, পাদুকা ও সমজাতীয় পণ্যের দর অনেক বেড়ে গেছে। পণ্য পরিবহনে জাহাজের লাগামহীন ব্যয়কে এ জন্য দায়ী করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা।রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা বলছেন, এ মুহূর্তে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন তারা। বিশ্বব্যাপী চাহিদাও ঊর্ধ্বমুখী। ফলে আপাতত তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা স্থায়ী হয়ে গেলে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিতে পড়বে দেশের রপ্তানি খাত।অস্বাভাবিক শিপিং ব্যয় নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠন। পোশাক এবং পাদুকা ও সমজাতীয় শিল্পের প্রধান বাণিজ্য সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেলস অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ) জাহাজের ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য ঠেকাতে এ সংক্রান্ত আইনে সংস্কার আনার দাবি জানিয়েছে সে দেশের সরকারের কাছে। স্বতন্ত্র একটি আইন করার দাবিও করা হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে গত সপ্তাহে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছে এএএফএ। চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ও পাদুকার বাজারে টানা ২০ বছর দর কমতে থাকার পর এখন সর্বোচ্চ মূল্যস্ম্ফীতির তথ্য দেওয়া হয়েছে। শিপিং লাইনের জন্য অযৌক্তিক ব্যয়, ডেমারেজ ফি ও অন্যান্য অনিয়মের বিষয়ে সংগঠনটি নজর রাখছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।


গত ডিসেম্বরের চেয়ে গেল জানুয়ারিতে রপ্তানি কম হয়েছে ৬ কোটি ডলার। এর প্রধান কারণ হিসেবে জাহাজ সংকটকেই দায়ী মনে করেন উদ্যোক্তারা। তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান কয়েক মাস ধরে সংগঠনের প্রায় সব বৈঠকেই এ বিষয়ে উদ্বেগের কথা বলে আসছেন।উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লোকবলের অভাবে পণ্য খালাসে বিলম্বসহ কিছু কারণে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বন্দরে জাহাজের জট তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিতে খালি জাহাজ এলে শিপিং লাইনগুলোর তাদের পোষায় না। পণ্য আনা ও নেওয়ার ভাড়ার নিশ্চয়তা না পেলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসতে চায় না। ইচ্ছামতো দর হাঁকাচ্ছে তারা। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় এক কনটেইনার পণ্যের পরিবহন ব্যয় বছরখানেক আগে ছিল পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। সেই ব্যয় এখন ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, জাহাজে পরিবহন ব্যয় কমাতে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো প্রতিবেশী তুরস্ক থেকে পোশাক আমদানি বাড়িয়েছে। গত বছর ইইউতে তুরস্কের রপ্তানি বেড়েছে ৩০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রও দেশটির প্রতিবেশী মেক্সিকো, পেরু, ব্রাজিল ও ডোমেনিকান প্রজাতন্ত্র থেকে আমদানি বাড়িয়েছে।তিনি বলেন, নিকট দূরত্ব থেকে সময় এবং ব্যয় সাশ্রয়ের কারণে তারা আমদানি বাড়াচ্ছেন। অনেক জায়গা থেকে স্থলেপথে পণ্য নিতে পারছেন ক্রেতারা। জাহাজের ব্যয় এড়ানো সম্ভব হয়। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই পণ্য বুঝে পান ক্রেতারা। যেখানে বাংলাদেশ থেকে জাহাজে রপ্তানিতে বাড়তি ব্যয় ছাড়াও সময় লাগে গড়ে ৪০ দিন। এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদে ঝুঁকিতে পড়ছে দেশের রপ্তানি খাত।