সংবাদপত্র শিল্পের টিকে থাকার স্বার্থে নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি, বিজ্ঞাপন আয়ের উৎসে কর কমানোর দাবি জানিয়েছে এ খাতের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। একইসঙ্গে এ খাতের কর্পোরেট কর কমানোর প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি।রোববার বিকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের জন্য অংশীজন সভায় এ দাবি জানান নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদ।এটি ছিল আগামী অর্থ বছরের বাজেট প্রণয়নের অংশীজন সভার প্রথম বৈঠক।এই বৈঠকের পর এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম সংবাদপত্র শিল্পের কর্পোরেট কর কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন।তিনি বলেন, রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। করের আওতা বাড়াতেও অবদান রাখছে। ফলে সংবাদপত্র শিল্পকে সহায়তা করতে অসুবিধা নেই। পাশাপাশি সংবাদপত্রকে শিল্প ঘোষণার পরেও সংবাদপত্রের কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে আগাম আয়কর কেন রাখা হয়েছে তা পর্যালোচনা করা হবে। সেখানেও কোনো সুযোগ দেওয়া গেলে বিবেচনা করবে এনবিআর।আলোচনার শুরুতে বক্তব্য রাখেন নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ। বিশ্বে প্রিন্ট মিডিয়ার অবস্থা ভালো নয়। সার্কুলেশন, বিজ্ঞাপন আগে থেকেই কম ছিল। করোনা সেই পরিস্থিতিকে ত্বরান্বিত করেছে। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। সংবাদপত্রের উৎপাদন খরচ বিক্রি মূল্যের কয়েক গুন। বিজ্ঞাপন আয় দিয়ে উৎপাদন খরচের ঘাটতি পূরণ করা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে বিজ্ঞাপন আয় ব্যাপকভাবে কমে গেছে।>
বাজার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে নিউজপ্রিন্টের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেড় বছর আগে প্রতিটন কাগজ ৫৭০ ডলারে পাওয়া গেলেও বর্তমানে কিনতে হচ্ছে ৮৯০ ডলারে। এদিকে করোনার আগে গড়ে বার্ষিক ২০ শতাংশ হারে বিজ্ঞাপন বাজার সংকুচিত হচ্ছিল। করোনার পরে বিজ্ঞাপনের বাজার সংকুচিত হয়েছে ৫৫ শতাংশ।এ কে আজাদ বলেন, ২০১৪ সালে সংবাদপত্রকে সেবা শিল্প হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্বায়ন ও ডিজিটাল যুগে ছাপা সংবাদপত্র রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। সেবা শিল্প হওয়া সত্ত্বেও সরকারের কাছ থেকে বিশেষ কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। করোনার এই সময়ে সরকারের কোনো প্রণোদনা পায়নি। সংবাদপত্র সেবা শিল্প হওয়া সত্ত্বেও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি, অনিবন্ধিত কোম্পানি ও নন-রেসিডেন্সিয়াল ক্যাটাগরিতে রেখে কর্পোরেট ট্যাক্স ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু অনেক মুনাফা অর্জনকারী শিল্পের কর্পোরেট ট্যাক্স ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। সংবাদপত্রের মত রুগ্ন শিল্পের কর্পোরেট ট্যাক্স ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত না।তিনি বলেন, সংবাদপত্রের প্রধান কাঁচামাল নিউজপ্রিন্ট, যা মোট খরচের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ অনুযায়ী সংবাদপত্র ভ্যাট অব্যহতিপ্রাপ্ত সেবার তালিকাভুক্ত। কিন্তু নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। নোয়াব মনে করে এ ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া উচিত। যদি কোনো কারণে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট রাখতে হয়, তাহলে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ করা যেতে পারে।তিনি জানান, সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর ৪ শতাংশ উৎসে কর (ট্যাক্স ডিটাকটেড অ্যাট সোর্স-টিডিএস) রয়েছে। আবার উৎসে স্থলে কাঁচামালের উপরে ৫ শতাংশ আগাম আয়কর (এআইটি) দিতে হয়। সম্প্রতি বিজ্ঞাপন আয় কমেছে। কাঁচামাল আমদানি খরচ বেড়েছে।