রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রায় পিছিয়ে তৈরি পোশাক খাতঢাকাসহ ৫ বিভাগে বৃষ্টির আভাস, অব্যাহত থাকবে তাপপ্রবাহপ্রতিদিন মা হারাচ্ছে ৩৭ ফিলিস্তিনি শিশুস্কুল-মাদ্রাসা খুলছে আজ, বন্ধ থাকছে ২৫ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানআজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস
No icon

কক্সবাজারের রেলপথ অনিরাপদ

প্রায় পৌনে ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে ট্রেন চলছে ঝুঁকি নিয়ে। সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) এ প্রকল্পে পাঁচ মাস ট্রেন চললেও চালু হয়নি কম্পিউটার বেজড ইন্টারলকিং সিস্টেম (সিবিআইএস)।জাতীয় নির্বাচনের আগে উদ্বোধন করা এ রেলপথে ট্রেন চলছে পুরোনো ম্যানুয়াল সিগন্যাল পদ্ধতিতে। এতে গতকাল বুধবার কক্সবাজারের ডুলাহাজারা স্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী বিশেষ ঈদ স্পেশাল-৯ ট্রেনের ইঞ্জিনসহ তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।এর আগে গত ৫ এপ্রিল সিগন্যালের ভুলে দুই ট্রেন মুখোমুখি চলে আসে। তবে চালকদের দক্ষতায় অল্পের জন্য এড়ানো যায় প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। এ রেলপথে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে জানিয়ে গত ১৬ এপ্রিল রেলওয়ের মহাপরিচালককে চিঠি দেন ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত কর্মচারী তথা রানিং স্টাফরা। গতকালের লাইনচ্যুতির বিষয়ে রেল কর্মকর্তাদের ভাষ্য, গরমসহ নানা কারণে লাইন সরে যাওয়ায় বগি লাইনচ্যুত হয়ে থাকতে পারে। তবে রেল সূত্র জানিয়েছে ভিন্ন তথ্য। সূত্রটি জানিয়েছে, সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা করে ঈদ স্পেশাল-৯ লোকাল ট্রেনটি সকাল ৯টা ৪৩ মিনিটে ডুলাহাজারা স্টেশনে বিরতি করে। নথি অনুযায়ী, ৯টা ৫০ মিনিটে স্টেশন মাস্টার পরবর্তী স্টেশন রামুতে যেতে লাইন ক্লিয়ার দেন। ট্রেনটি যাত্রা করার পর লোকোমাস্টার (চালক) দেখতে পান, রেললাইনের পয়েন্ট ফেভারে নেই। কাটা পয়েন্ট খোলা অর্থাৎ লাইনটি ওপেন। চালক তখনই ব্রেক কষেন। তারপরও ইঞ্জিন ও বগি লাইনচ্যুত হয়।

এ সূত্রের দাবি, স্টেশন মাস্টার কিংবা পয়েন্টসম্যান ভুল করেছেন। স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা থাকলে এমনটি ঘটত না। নতুন নির্মিত কক্সবাজার রেললাইন ৬০ কেজির। এ পথে যথাযথ স্লিপার ও পাথর রয়েছে। গরমে লাইন সরে যাওয়ার কারণ নেই। সিবিআইএস না থাকায়, ম্যানুয়াল পদ্ধতির কারণে পয়েন্ট সেট না করে লাইন ক্লিয়ার দেওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটে।রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) সাইফুল ইসলাম বলেছেন, পয়েন্ট সেট না করাসহ অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। কে কী বলছে, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। সব যাচাই-বাছাই ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্তে প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে। আগামী মঙ্গলবার কমিটি প্রতিবেদন দেবে।গত ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করেন। ১ ডিসেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে চালু হয় কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন। পরের মাসে চালু হয় পর্যটক এক্সপ্রেস। ট্রেন দুটি বিরতিহীন। পর্যটন নগরীকে যুক্ত করা এ রেলপথ ভ্রমণে যাত্রীদের আগ্রহ তুঙ্গে। আগামী জুনে এ পথে আরও চারটি ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। ঈদের সময় চট্টগ্রাম থেকে চলা বিশেষ ট্রেনটি স্থায়ী হতে পারে।

সরকারের নির্দেশে কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রকল্প থেকে জানা গেছে, সিবিআইএসের কাজ দ্রুত চলছে, জুনের মধ্যে শেষ হবে। এটি চালুর পর দুর্ঘটনার শঙ্কা কমে যাবে। তখন মানুষ নয়, সফটওয়্যার কাজ করবে।কয়েকজন ট্রেনচালক ও রানিং স্টাফ সমকালকে জানিয়েছেন, সিগন্যাল পোস্ট থাকলেও তা কার্যকর নয়। সব স্টেশনও চালু নয়। এ কারণে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। নেই মাইল পোস্ট। তাই চালকরা কত গতিতে ট্রেন চলছে বুঝতে পারেন না। কিন্তু কর্তৃপক্ষের চাপ রয়েছে, দ্রুতগতিতে চালিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার। নতুন রেলপথ এখনও প্রকল্পের ঠিকাদারের অধীনে, রেলকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। সিবিআইএস চালু না হওয়া পর্যন্ত রেলপথ পরিদর্শন অধিদপ্তর দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পথে সিঙ্গেল ট্রেন তথা একই সময়ে একাধিক ট্রেন চালাতে বলেছিল, যাতে দুই ট্রেনের ক্রসিং না থাকে। এক লাইন রেলপথ হওয়ায়, ট্রেনে ট্রেনে ক্রসিং হয় এ পথে। আর ম্যানুয়াল সিগন্যালিং পদ্ধতি তৈরি করেছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।