সাংবাদিক নেতা মোল্লা জালাল গ্রেপ্তার যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজইসি গঠনে ৭ নভেম্বরের মধ্যে নাম চেয়েছে সার্চ কমিটিইসরাইলি হামলায় আরও ৩১ ফিলিস্তিনি নিহতআজ সংবিধান দিবস
No icon

এমপির পদত্যাগপত্র কবে কীভাবে কার্যকর

বিএনপিদলীয় সাত এমপি সংসদ ছাড়ার ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত কিছুই জানেন না স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। যদিও বিএনপির এমপিরা দাবি করেছেন, তাঁরা ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। আইন অনুযায়ী ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠালে তা আমলযোগ্য হওয়ার সুযোগ নেই। কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী, নিজের হাতে লিখিতভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে।গতকাল শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপি আয়োজিত গণসমাবেশে সাত এমপি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। গতকাল সন্ধ্যায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানিয়েছেন, বিএনপির সংসদ সদস্যদের কোনো চিঠি তিনি পাননি। তাঁর কাছে কোনো চিঠিও আসেনি।ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুও জানিয়েছেন, এ ধরনের কোনো পদত্যাগপত্র স্পিকারের দপ্তরে পৌঁছেছে কিনা, তাঁর জানা নেই। এ ছাড়া গতকাল স্পিকারের কার্যালয় বন্ধ থাকায় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারাও বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি।সংসদের আইন শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে (বিধি ১৭৭) বলা আছে, সংসদ থেকে কোনো সদস্য পদত্যাগ করতে চাইলে স্পিকারকে সম্বোধন করে নিজের হাতে লিখিত আবেদনে জানাবেন- তিনি পদত্যাগ করতে চান। পদত্যাগের জন্য সংশ্নিষ্ট এমপি কোনো কারণ দেখাতে পারবেন না। এই বিধির শর্তাংশে বলা আছে, কোনো সদস্য যদি কোনো কারণ উল্লেখ করেন, অপ্রাসঙ্গিক কোনো বিষয়ের অবতারণা করেন, তাহলে স্পিকার নিজের বিবেচনামতে ওই শব্দ বাদ দিতে পারবেন এবং তা সংসদের বৈঠকে পড়ে শোনাবেন।

একইভাবে সংবিধানের ৬৭(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে,কোন সংসদ সদস্য স্পিকারের নিকট স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদত্যাগ করিতে পারিবেন এবং স্পিকার কিংবা স্পিকারের পদ শূন্য থাকিলে বা অন্য কোন কারণে স্পিকার স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ডেপুটি স্পিকার যখন উক্ত পত্র প্রাপ্ত হন, তখন হইতে উক্ত সদস্যের আসন শূন্য হইবে।২০০৯ সালের দশম সংসদ থেকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে তাঁর সহকারীর মাধ্যমে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন স্পিকারের দপ্তর তা গ্রহণ করেননি। ওই সময়ের স্পিকার (বর্তমান রাষ্ট্রপতি) আবদুল হামিদ জানিয়েছিলেন, সোহেল তাজ সশরীরে এসে পদত্যাগপত্র জমা দিলে তা গ্রহণ করা হবে। পরে তিনি নিজে এসে পদত্যাগপত্র জমা দেন।দেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯৯৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় সংসদের ১৪৭ বিরোধী দলীয় সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেন। এদিন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও এনডিপির সদস্যরা স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

তৎকালীন স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী পদত্যাগপত্র গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে রুলিং দেন। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগপত্র অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যায়িত করেন। তবে পরে টানা ৯০ দিন সংসদের বৈঠকে অনুপস্থিতির কারণে তাঁদের আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করা হয়েছিল।বিএনপিদলীয় এমপি জাহিদুর রহমান জানিয়েছেন, আজ গুলশান অফিসে দলীয় এমপিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। সেখানে আলাপ-আলোচনার পর সবাই মিলে স্পিকারের দপ্তরে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া হতে পারেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সমাবেশে ই-মেইলে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া হলেও এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হওয়া বিএনপির এমপিদের মধ্যে সবার আগে শপথের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের এই এমপি জানিয়েছেন, স্পিকার পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করলেও তাঁরা আর সংসদে যাচ্ছেন না। তিনি বলেন, এমপিদের পদত্যাগের বিষয়ে এখন থেকে তিন মাস আগেই দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল। হাইকমান্ড থেকে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ তাঁরা আগেই পেয়েছিলেন। তখনই বলা হয়েছিল, সারাদেশের বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করে ঢাকায় শেষ সমাবেশে এ ঘোষণা দেওয়া হবে। মাস দুয়েক আগেই তাঁরা পদত্যাগপত্রে সই করে দলের কাছে জমা দিয়ে রেখেছিলেন বলেও জানান এই এমপি।