ন্যায্য সমাজ এবং ন্যায়বিচারের জন্য পূর্বশর্ত উন্নত গণতন্ত্র। এর অভাবে সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি হয়। ন্যায্য বণ্টন ব্যবস্থার অভাবে সামাজিক সুরক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় অন্যান্য সম্পদের সুবিধা সমহারে সব নাগরিক পায় না। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা- সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হয়। ফলে অর্থনৈতিক উন্নতি সত্ত্বেও সমাজে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আবার কিছু বড় শিল্প গ্রুপের মুনাফা অর্জনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকলেও তারা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে খেলাপি হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে বড় শিল্প গ্রুপও ঋণ নিয়ে পাচার করছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) উন্নয়নবিষয়ক বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম কর্মঅধিবেশনে এসব কথা বলেছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্টজন।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান বলেন, রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালীরা ক্ষমতা এবং সম্পদ নিয়ন্ত্রণে রাখে। সংসদ সদস্যদের ৮০ শতাংশ ব্যবসায়ী। এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও একই বাস্তবতা। বৈষম্যপূর্ণ সমাজ বৈষম্যপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করেছে। দেশে বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। জনগণের জন্য সরকারের ব্যয় যথেষ্ট কম। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের উচ্চবিত্ত মানুষের আয় বাদ দিয়ে জাতীয় আয় পরিমাপের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বিবিএস যদি এ ধরনের জরিপ করতে পারে, তাহলে জাতীয় খানা আয়ের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে।রেহমান সোবহান আরও বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম ব্যর্থ হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। কোনো সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে কাজ করেনি। সেই সুযোগ নিয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি খাত রাষ্ট্রীয় সহায়তাসহ ব্যাংকিং সহায়তা পেয়েছে। মন্ত্রীরা সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায় দিয়েছেন। অথচ দায় সরকারি ব্যবস্থাপনার।
গণতান্ত্রিক উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সমাজতন্ত্রের পুনর্বিবেচনা শিরোনামের অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, কিছু বড় শিল্প গ্রুপের মুনাফা অর্জনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকলেও তারা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে খেলাপি হয়ে যায়। এর একটা কারণ বিদেশে মুনাফা পাচার। এ ক্ষেত্রে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখতে বারবার ঋণ তপশিলিকরণ, সুদ মওকুফসহ নানা সুবিধা দিতে হবে।ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সমাজতন্ত্রের ধারণা ছিল অনেক বেশি মৌলিক।তার পর বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের পরামর্শে সবকিছুতে উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ এবং বাজারভিত্তিক নীতিকে সমর্থন জোগানো হয়।