ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনতে অর্থ সংস্থান কীভাবে হবে সেই ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। প্রয়োজনীয় খরচের জোগান দিতে অর্থ মন্ত্রণালয় রাজি কিনা এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের সুস্পষ্ট মতামত জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) পরিকল্পনা কমিশন পরামর্শ দিয়েছে। সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সব ধরনের খরচের ক্ষেত্রে সরকারের কৃচ্ছ্র নীতি রয়েছে। এ পটভূমিতে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য নির্বাচন-সংশ্নিষ্ট খাতের খরচ ঠিক রেখে অন্য ব্যয় কমাতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রশাসনিক খরচ, সেবা, সম্মানী এমনকি ভূমি অধিগ্রহণ- এ রকম খাতগুলোর প্রস্তাবিত খরচে আপত্তি জানানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে।ইভিএম ক্রয়সংক্রান্ত ইসির প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর মূল্যায়নে এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশন-সংশ্নিষ্ট আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগ এই মূল্যায়ন করেছে। তবে এই অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রকল্পটি তালিকাভুক্ত করা হয়। জানা গেছে, ইসির জমা দেওয়া ডিপিপির ওপর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের প্রোগ্রামিং কমিটির একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সুপারিশ এবং পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের অনুমোদনের পর নতুন এডিপিতে প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই অর্থবছরের অনুমোদিত এডিপির তালিকায় প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত ছিল না।আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে নির্বাচন ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা নামে ডিপিপি জমা দেওয়া হয় পরিকল্পনা কমিশনে। এ জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। এ অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের অনুকূলে এডিপিতে বরাদ্দ আছে ৭৪৯ কোটি টাকা। এ কারণে বাড়তি টাকার জোগানের নিশ্চয়তা নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সংশয় রয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, আগামী সংসদ নির্বাচনে ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্র থাকবে। এর মধ্যে ইভিএমে ভোট হবে এ রকম ১৫০ আসনে কেন্দ্র থাকবে ২৫ হাজার। প্রতি কেন্দ্রে ৭টি করে ভোটকক্ষ থাকবে। প্রতিটি কক্ষে গড়ে দেড়টি করে মোট ২ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ কোটি ইভিএম সেটের প্রয়োজন হবে। এর বাইরে ভোটারদের শিখনের জন্য প্রতি কেন্দ্রে দুটি করে ৫০ হাজার এবং প্রশিক্ষণে ব্যবহারের জন্য আরও ২৫ হাজার প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া রিজার্ভ হিসেবে আরও ৫০০ ইভিএমের প্রস্তাব করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ৩ লাখ ৩৮ হাজার ইভিএমের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে ইসি। এসব সেট সংরক্ষণেও বিশাল খরচ গুনতে হবে। ১০টি অঞ্চলে স্টিল কাঠামোর ওয়্যারহাউস নির্মাণ করা হবে। এতদিন ইভিএম সেট সংরক্ষণে মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি বকেয়া বাবদ ৩৬ কোটি ২১ লাখ টাকা দাবি করেছে।এর আগে ২০১৮ সালে নির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের উদ্দেশ্যে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে একটি প্রকল্প নেয় ইসি। একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পটির খরচ ছিল ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম কেনা হয়। ওই সব ইভিএমের বয়স এখন চার বছর। আগামী বছর ওই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।