প্রায় দুই সপ্তাহের ধারাবাহিক বৈঠক ও দরকষাকষির পর অবশেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের বিষয়ে এলো ইতিবাচক বার্তা। রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতিতে পরিবর্তনসহ আর্থিক খাতে বেশ কিছু সংস্কারের শর্তে বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে আইএমএফ। এ ঋণের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে রক্ষা করে শক্তিশালী, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সবুজ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করা।বাংলাদেশ সরকার এবং ঢাকায় সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের মধ্যে গতকাল বুধবার শেষ হয়েছে এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত আলোচনা। আইএমএফ জানিয়েছে, ঋণসহায়তা করার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। তাদের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী তিন মাসের মধ্যে ঋণ প্রস্তাবের সব আনুষ্ঠানিকতা ও তাদের পর্ষদে চূড়ান্ত অনুমোদন হবে। মোট সাত কিস্তিতে ঋণ পাওয়া যাবে। প্রথম কিস্তির ঋণ মিলবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। আর সর্বশেষ কিস্তির ঋণ পাওয়া যাবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। আইএমএফের ঋণের সুদহার হবে বাজারদর অনুযায়ী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, তাতে গড় সুদহার হতে পারে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবেই ঋণ পাচ্ছি। আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো বলে তারা আমাদের জানিয়েছেন।এদিকে আইএমএফের এ ঋণদান প্রসঙ্গে বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋণের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং সুদের হারও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ সুদহার চড়া নয়। বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার ঋণে ধার্যকৃত সুদের চেয়ে আইএমএফের এ ঋণের সুদহার বেশি। এ ছাড়া বাজারদরের ওপর সুদের হার নির্ভর করবে বলা হলেও কোন সময়ের বাজারদর সে বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। সুতরাং ঋণ পরিশোধের সময় বাংলাদেশকে বাড়তি অর্থ গুনতে হতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বলা হচ্ছে আইএমএফের ঋণের সুদহার হবে বাজারদর অনুযায়ী। কিন্তু কোন বাজার অনুযায়ী হবে তা পরিষ্কার নয়। বর্তমান বাজারে সুদের হার বেশি। সে হিসাবে ২ দশমিক ২ শতাংশ সুদের হার হয়তো বেশি নয়। কিন্তু ভবিষ্যতে বাজারদর বাড়তেও পারে। তা এখন বলা যাচ্ছে না।বাংলাদেশের প্রয়োজনের তুলনায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার অপ্রতুল বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার যে সংকট রয়েছে তার এক কোনা ভরবে মাত্র। একটা পুকুরে এক বালতি ঢালার মতো। এ অর্থের সঙ্গে সহায়ক সংস্কার কার্যক্রমগুলো মুখ্য বিষয়। আমরা শুনছি আইএমএফ বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে। কিন্তু এ বিষয়েও নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। এক্ষেত্রে সাধারণ কিছু জিনিস বলা হচ্ছে, তবে পদক্ষেপগুলো কী হবে তা পরিষ্কার নয়।