বাংলাদেশে দূষণের মাত্রা প্রতি বছর ভয়াবহ মাত্রায় বাড়ছে। দেশের প্রধান শহরগুলোতে উচ্চ শিল্পায়ন ও নগরায়ণ প্লাস্টিক ও বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে। এটা স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করছে। ব্যাহত করছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এসব তথ্য দিয়েছে।সংস্থাটি জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত মাত্রা থেকে এ দেশের শহরগুলোতে বায়ুদূষণ ১৫ গুণ। দেশে মোট মৃত্যুর ২০ শতাংশ ঘটেছে বায়ুদূষণের ফলে। বায়ুদূষণের কারণে গত ২০ বছর মৃত্যু ৯ শতাংশ বেড়েছে। ঢাকা শহরের নাগরিকরা ৮ বছরেরও বেশি প্রত্যাশিত আয়ু হারা দূষণের কারণে। অন্যদিকে প্রতি বছর মানুষের মধ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে। ২০০৫ সালে দেশে মাথাপিছু প্রতি বছর ৯ দশমিক ২ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহূত হয়। ২০২০ সালে তা ২২ দশমিক ৩ কেজিতে দাঁড়ায়।এসব সমস্যার জন্য অতি মাত্রায় প্লাস্টিকের ব্যবহার, ইটভাটার দৌরাত্ম্য, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতিকে মূলত দায়ী করা হয়েছে।
সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক ইন সেন্টারে এক সভায় এসব উদ্বেগজনক তথ্য উপস্থাপন করা হয়। সিপিডি-গ্রিন সিটিজ ইনিশিয়েটিভ শীর্ষক কার্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এ সভার আলোচ্য বিষয় ছিল, গ্রিনিং সিটিজ থ্রু রিডিউসিং এয়ার অ্যান্ড প্লাস্টিক পল্যুশন (বায়ু ও প্লাস্টিকদূষণ হ্রাসের মাধ্যমে সবুজ শহর)।সভায় বলা হয়, নীতিগত পদক্ষেপ ছাড়া দূষণ সমস্যা আরও খারাপ হবে এবং স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বায়ু ও প্লাস্টিকদূষণ মোকাবিলায় নীতি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রয়োজন।সভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষণের গুরুতর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যগত প্রভাব রয়েছে এবং তা অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। এটা উৎপাদনশীলতা কমিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করে। শক্তিশালী রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না হলে আগামী বছরগুলোতে বায়ুদূষণ বাড়তে পারে।বাংলাদেশে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ যানবাহন। ২০০৯ থেকে ২১ সালের মধ্যে ঢাকায় মোটরযানের নিবন্ধন বেড়েছে ২৮৩ শতাংশ। খারাপ বায়ু টাইপ-২ ডায়াবেটিস, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, ফুসফুসের রোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং দীর্ঘস্থায়ী হৃদরোগের জন্য দায়ী। এ অবস্থা নিরসনে সমন্বিত বহুমাত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত। তিনি বলেন, পলিথিন-প্লাস্টিকের কারণে দেশের নদীগুলো মারাত্মক দূষিত হচ্ছে। কর্ণফুলী নদীর দূষণের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের দায় ৩৯ শতাংশ। রূপসা নদীর ক্ষেত্রে এ হার ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া অন্যান্য নদীদূষণের ক্ষেত্রেও প্লাস্টিক দায়ী।মূল প্রবন্ধে বলা হয়, রাজধানীতে প্রতি বছর ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে ৪৮ শতাংশ ল্যান্ডফিলে ফেলা হয়। ৩৭ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়। ১২ শতাংশের গন্তব্য নদীতে। অন্যান্য স্থানে পড়ে থাকে বাকি ৩ শতাংশ।সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বায়ুর মান কখনোই স্বাস্থ্যসম্মত থাকে না। জুলাই-আগস্ট মাসে কিছুদিনের জন্য বাতাসের মান থাকে চলনসই। এ ছাড়া বছরের বাকি সময়ে কখনও অস্বাস্থ্যকর, কখনও খুবই অস্বাস্থ্যকর থাকে। বায়ুদূষণের কারণে দেশবাসীর যে স্বাস্থ্যহানি ঘটে, তার জন্য প্রত্যেককে প্রতি বছর ৮ হাজার ৩৩৪ টাকা খরচ করতে হয়। বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর ঢাকা মহানগরীতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪৪ কোটি মার্কিন ডলার। আর মোট ক্ষতির পরিমাণ ৬৫২ কোটি মার্কিন ডলার, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৪ শতাংশ।