ওপরে নদী। নিচ দিয়ে বছরে ছুটে চলবে ৭৬ লাখ গাড়ি!ওয়ান সিটি টু টাউন স্লোগান নিয়ে এমন স্বপ্নের যাত্রার শুরু এক যুগ আগে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নামের এই স্বপ্নের দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। তবে এর সুফল পাবে পুরো দেশ। এটি দেশের অর্থনীতিকেও দেবে নতুন রূপ। নদীর তলদেশ থেকে ১৮ থেকে ৩৬ মিটার গভীরে ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুটি সুড়ঙ্গ করে এগিয়ে নেওয়া হয়েছে স্বপ্নের পথ। এটিকে বাস্তবে রূপ দিতে সুড়ঙ্গের ভেতর তৈরি হয়েছে দুটি টিউবও। নদীর বুক চিরে সেই দুটি টিউবের ভেতর করা হয়েছে চার লেন সড়ক। আসছে ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলে দেবেন এই স্বপ্নের দরজা। এখন প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেমন ভূমিকা রাখতে পারে এই টানেল- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, অর্থনীতি সুদৃঢ় করতে দীর্ঘমেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই টানেল। টানেল ঘিরে মিরসরাই থেকে মেরিন ড্রাইভ চলে যাবে কক্সবাজার পর্যন্ত। তখন রাস্তার দুই ধারে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমও নদীর ওপারে সম্প্রসারিত করার সুযোগ তৈরি হবে।
যেভাবে টানেলের যুগে বাংলাদেশ: চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় গেলে কর্ণফুলীতে টানেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১০ সালে প্রস্তাবটি প্রকল্প আকারে উপস্থাপন করা হয়। ২০১২ সালে ১২ কোটি টাকা খরচে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে চীনা কোম্পানি সিসিসিসির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে। দুই দেশের চুক্তি সই হয় ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণসহ মোট ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। মাঝপথে দুবছর করোনা হানা দিলেও নির্ধারিত সময়েই শেষ হচ্ছে টানেলের কাজ।
টানেলে গতি পাবে অর্থনীতি: টানেল ঘিরে সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি। এখন শিল্পকারখানা নগরকেন্দ্রিক থাকলেও টানেল চালু হলে নদীর ওপারেও তৈরি হবে সুযোগ। ওপারেও তখন সম্প্রসারিত হবে শিল্পকারখানা। চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, টানেলে যান চলাচল শুরু হলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী যানবাহনকে আর চট্টগ্রাম শহরে ঢুকতে হবে না। এতে চট্টগ্রাম শহরে যানবাহনের চাপ কমে যাবে। টানেলের সড়ক এক সময় এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হয়ে দাঁড়াবে। তিনি জানান, কিছুদিন পর সমুদ্রের পাড়ে বে-টার্মিনাল চালু হবে। সেখানে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মযজ্ঞ হবে। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল পুরোদমে চালু হলে লাখ লাখ মানুষ সেখানে থাকবে।
ডিসেম্বরের অপেক্ষা: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, অক্টোবরে টানেলের একটি সুড়ঙ্গ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে; অন্যটি চালু করা হবে নভেম্বরে। টানেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ডিসেম্বরে হবে। তবে প্রকল্প পরিচালক বলছেন, দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত বলতে পারব না আমরা। কারণ ট্রায়াল দিতে গেলে হয়তো নতুন নতুন জটিলতা বের হয়ে আসতে পারে। প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে কাজ শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।