যুক্তরাজ্যে যাচ্ছে সীতাকুণ্ডের লিচুগাজায় ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলের হামলায় নিহত ১২১ ফিলিস্তিনি১১ বছর পর আবারও এভারেস্ট চূড়ায় বাংলাদেশ দুপুরের মধ্যে ঝড়ের আভাস৩ দিন ভারত ভ্রমণে যেতে পারবেন না বাংলাদেশিরা
No icon

ছড়িয়ে পড়ছে বন্যা

প্রায় সব নদী-নদীর পানি বাড়তে থাকায় দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে জেলাগুলোর মধ্যে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পানি কমার সম্ভাবনা নেই। পানি বাড়বে জামালপুর ও টাঙ্গাইলেও। অন্যদিকে সিলেট অঞ্চলে কিছু জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও নতুন করে প্লাবিত হয়েছে অনেক এলাকা।ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত সোমবার রংপুর সীমান্তের ওপারে শিলিগুড়িতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। এতে ব্যাপক পানি বেড়েছে মহানন্দা নদীতে। মহানন্দার আশপাশের অনেক এলাকা এরই মধ্যে ডুবে গেছে।বাংলাদেশের বন্যা পুনর্বাসন ও সতর্কতা কেন্দ্র বলছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকাসহ দেশের সব নদীতে পানি বাড়তে পারে। এ সময়ে আসাম, হিমালয়সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত কমেছে এবং আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বাড়ার আশঙ্কা নেই। দৈনিক আমাদের সময়ের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের চারটি পয়েন্টেই বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। একই অবস্থা যমুনা নদীর পাঁচটি পয়েন্টে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধার ধরলা ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে রয়েছে।

এ ছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর চলে যেতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আশঙ্কা করা হয়েছে। অন্যদিকে পদ্মা নদীর সুরেশ্বর পয়েন্টের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও হবিগঞ্জে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। সুরমা-কুশিয়ারার পানি গতকালও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ভারতের ত্রিপুরায় ভারী বর্ষণে কুমিল্লার গোমতী নদীতেও পানি বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে নদীর আশপাশের অনেক এলাকা ডুবে গেছে। মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফেনীতেও তলিয়েছে নতুন এলাকা।গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, সব নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। গতকাল বিকাল ৩টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তিস্তা ও করতোয়ায় বিপদসীমার নিচে থাকলেও পানি বাড়ছে।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, তিস্তা ও ধরলার পানি বেড়ে জেলার ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নদীগর্ভে বাড়িঘর হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার। গতকাল সকাল ৯টায় হাতীবান্ধার দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই ছিল।ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি জানান, বন্যার কারণে ৬৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে প্রতিদিনই ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ছে। গতকাল বিকালে ফুলছড়ি পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, তিস্তা নদীর পানি গতকালও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ দৌলা জানান, এ জেলায় দুদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত নেই। কিন্তু ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের জলকপাট খুলে দেওয়ায় সেখানকার পানি ধেয়ে আসছে তিস্তায়। ফলে বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে তিস্তার পানি।

নিজস্ব প্রতিবেদক (কুড়িগ্রাম) জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি গতকালও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর পানি অনেক জায়গায় আটকে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে বানভাসিদের। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকট তৈরি হয়েছে। গবাদিপশুর খাবারও পাওয়া যাচ্ছে না।গতকাল কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।