বাসের ‘গেটলক সিস্টেম’ চালু হচ্ছে আজফের গরম আসছে, তবে অস্বস্তিকর নয় বিশ্ব মা দিবস আজনতুন বিনিয়োগকারী কম আসছে শেয়ারবাজারেএসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ আজ
No icon

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আর নেই

কীর্তিমান রাজনীতিবিদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আর নেই। শুক্রবার গভীর রাতে তিনি মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। তিনি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।আমার জীবন মহাতৃপ্তি আর মহাপ্রাপ্তির। ৮৮ বছরেও বেঁচে আছি। অনেক লম্বা সময়- এর চেয়ে আর কী হতে পারে। গত ১৭ মার্চ সিলেটে এক সাক্ষাৎকারে এমনটিই বলছিলেন তিনি। শুধু এ সাক্ষাৎকারেই নয়, তার কথায় বারবার এসেছে তৃপ্ত মানুষের উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠ। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ গঠন, চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের যাত্রা। তিনি বলতেন বিরাট পরিবর্তন, ভালো লাগে, চোখ জুড়ায়।বেশ কিছুদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ মুহিতকে শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানায়। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে।শারীরিক অসুস্থতার জন্য চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে ছিলেন তিনি। গত ৫ মার্চ রাজধানীর বনানীর বাসায় তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হলে তাকে বাসায় নেওয়া হয়।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকবার্তায় তারা মুহিতের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারে প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।মুহিতের প্রথম জানাজা আজ সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর গুলশান আজাদ মসজিদে এবং দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ১১টায় সংসদ প্লাজায়। এরপর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দুপুর ১২টায় তার মরদেহ রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার লাশ নেওয়া হবে সিলেটে।১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মুহিত। শিক্ষা, সরকারি চাকরি, রাজনীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য মিলিয়ে বর্ণাঢ্য জীবন তার। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ভাষাসংগ্রামেও অংশ নিয়েছেন। তিনি ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। এরপর টানা ১০ বছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে এরশাদ সরকারের সময় ১৯৮২ থেকে ৮৩ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার বাজেট দিয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালে অবসর নেন রাজনীতি থেকে। স্ত্রী সৈয়দা সাবিয়া মুহিত, ছেলে, পুত্রবধূ, নাতি ও মেয়েকে নিয়ে থাকতেন বনানীতে নিজ বাড়িতে।

মুহিতের বাবা অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ এবং মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরী রাজনীতি ও সমাজসেবায় সক্রিয় ছিলেন। মুহিতের আরও ১২ ভাইবোন ছিল। এর মধ্যে বর্তমানে ১০ জন জীবিত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তার ভাই।সংস্কৃতিমনা পারিবারিক আবহে বেড়ে ওঠা মুহিত কৈশোরেই সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় জড়িয়ে পড়েন। শিশু-কিশোর সংগঠন মুকুল ফৌজ গঠন করে নেমে পড়েন সৃজনশীল চর্চায়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার সৃজনশীল চর্চা অব্যাহত ছিল।মুহিত ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি ১৯৪৮ সালে স্কুলছাত্র হিসেবে প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন এবং রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িত হন। ১৯৪৯ সালে সিলেট সরকারি পাইলট হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় কৃতকার্য হন। ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান, ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমএ পাস করেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি অপফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নসহ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি লাভ করেন।