সিপিবি নেতা হায়দার আকবর খান রনো মারা গেছেনকষ্টার্জিত জয়ে ব্যবধান ৪-০ করল বাংলাদেশস্বাধীন ফিলিস্তিন গঠনের পক্ষে বাংলাদেশসহ ১৪৩ দেশসকালে সন্ধ্যা নেমে এলো ঢাকায়, নামল স্বস্তির বৃষ্টিআগামী ৩ দিন যেমন থাকবে আবহাওয়া
No icon

গাড়ির সারি লম্বা যত, চাঁদার পরিমাণ বাড়ে তত

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ঘাটে গাড়িজটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঘাট-সংশ্নিষ্ট চিহ্নিত প্রভাবশালী চক্র। ঘাট এলাকায় যানবাহনের সারি বড় হতে থাকলে পাল্লা দিয়ে বাড়ে দালাল চক্রের চাঁদার অঙ্ক। এ ছাড়া ফেরিতে আনলোড হওয়া প্রতিটি গাড়ি থেকে বিআইডব্লিউটিসির কর্মচারীরা প্রকাশ্যে আদায় করে চাঁদা। সংশ্নিষ্টদের হিসাব মতে, এভাবে প্রতি মাসে আদায় করা হয় অন্তত ১০ লাখ টাকা।ঘাট দিয়ে পারাপার হওয়া প্রায় সব পণ্যবাহী ট্রাকের চালককে দালাল চক্রের সদস্যদের হাতে অতিরিক্ত টাকা গুঁজে দিয়ে ফেরির নাগাল পেতে হয়। অতিরিক্ত টাকা খরচ না করে ট্রাকচালকের দৌলতদিয়া ঘাট পাড়ি দেওয়া প্রায় অসম্ভব। অভিযোগ রয়েছে, এই টাকার ভাগ ওপর মহল পর্যন্ত যায়।অনুসন্ধানে জানা গেছে, নাব্য, ফেরি সংকটসহ নানা কারণে ধুঁকছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ। অব্যাহত যানজটে যাত্রী ও পরিবহন চালকরা দিনের পর দিন ভোগান্তিতে পড়ছেন। এ অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের ছায়ায় গড়ে ওঠা দালাল চক্র, ট্রাফিক পুলিশ, ফেরি বুকিং কাউন্টার কর্মীসহ সুযোগসন্ধানীরা। দিন নেই, রাত নেই- ঘাটের এসব চক্র চাঁদা তুলতে বেপরোয়া থাকে সবসময়। এই অপতৎপরতা চালিয়ে নেওয়ার জন্য শতাধিক দাপুটে সদস্য ঘাটে সক্রিয় থাকে। ঈদ মৌসুমে স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট যানবাহন পারাপারে সচেষ্ট থাকলেও ঘাটের পয়েন্টে পয়েন্টে দেখা যায় চিহ্নিত দালালদের অপতৎপরতা।ঘাট-সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, ঈদের আগে যানবাহনের চাপ বাড়ায় স্থানীয় প্রভাবশালী দালালদের নড়াচড়া আরও বেড়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা ও জনপ্রতিনিধির ইন্ধনে তাদের লোকজন আগেভাগে ফেরিতে ওঠার ব্যবস্থার কথা বলে পণ্যবাহী গাড়ি থেকে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ বহু পুরোনো। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তরমুজবাহী কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, মাছের গাড়ি, অন্য ফলের গাড়ি থেকে নির্ধারিত টিকিটের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে।


ঘাট-সংশ্নিষ্ট এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ সরকারদলীয় স্থানীয় কয়েকজন নেতা ফলের গাড়ি থেকে নিয়মিত টাকা তোলেন। প্রতিটি গাড়ি থেকে নির্ধারিত ভাড়ার সঙ্গে অতিরিক্ত ১৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। কখনও কখনও টাকার অঙ্ক আরও বাড়ে। এ ছাড়া মাছবাহী ট্রাক থেকে টাকা আদায় করেন স্থানীয় যুবলীগের এক নেতা।গতকাল বুধবার দুপুর ২টার দিকে দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাট পন্টুনে কথা হয় বরগুনা থেকে তরমুজবোঝাই করে আসা ট্রাকচালক আবু জাহার সঙ্গে। তিনি জানান, এক হাজার ৬০ টাকা মূল্যের ফেরির টিকিট দালালদের মাধ্যমে দুই হাজার টাকায় পেয়েছি। আজ গাড়ির সিরিয়াল অন্যদিনের চেয়ে একটু কম, তাই কম টাকায় ফেরির টিকিট পেয়েছি। নিজেরা টিকিট সংগ্রহ করেন না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিজেরা টিকিট করে বিপদে পড়ব নাকি? দালালদের মাধ্যমে টিকিট না নিলে ঘাটে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। তাই আমরা সব সময় দালালদের মাধ্যমে টিকিট নিয়ে থাকি।এর আগে মহাসড়কের দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুলের সামনে সিরিয়ালে আটকে থাকা ভোমরা স্থলবন্দর থেকে আসা বেদানাবোঝাই ট্রাকচালক রফিকুল ইসলাম জানান, শাহিন নামের এক ব্যক্তি তার ফেরির টিকিট সংগ্রহ করে দেন। বিনিময়ে গাড়ির সিরিয়াল অনুযায়ী টিকিট দরের চেয়ে ৫০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়।সাতক্ষীরা থেকে ছেড়ে আসা ব্যাটারিবোঝাই কাভার্ডভ্যান চালক মো. রেজাউল জানান, শামীম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি তার গাড়ির ফেরির টিকিট সংগ্রহ করে দেয়। এর বিনিময়ে তাকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়।জানা যায়, দৌলতদিয়া ঘাটের অবৈধ আয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলের একাধিক গ্রুপ মারমুখী হয়ে ওঠে। এ নিয়ে একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।