তাপপ্রবাহের মধ্যেই আজ খুলছে স্কুল-কলেজযুদ্ধবিরতি সম্পর্কে ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পেলো হামাসঝুম বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরলো সিলেটেজলবায়ু পরিবর্তনজনিত কতটা ঝুঁকিতে বাংলাদেশতানজানিয়ায় ভারী বৃষ্টি-ভূমিধসে নিহত ১৫৫
No icon

এত বাংলাদেশি কেন ইউরোপে যাচ্ছেন

উন্নত জীবনের আশায় প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরোপে প্রবেশকারীদের তালিকায় শীর্ষে আছেন বাংলাদেশিরা। এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দারিদ্র্যপীড়িত মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার দেশগুলোর চেয়েও বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশি। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের দ্য টেলিগ্রাফ।এতে বলা হয়েছে, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলোর নাগরিকদের পাশাপাশি প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিও ইউরোপে অনুপ্রবেশ করছেন। পূর্ব ইউরোপের গভীর অরণ্য ও ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে উন্নত দেশগুলোতে প্রবেশের এই যাত্রায় মারাও যাচ্ছেন তাদের অনেকে। ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে ইউরোপে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ইতালিতে প্রবেশের জন্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছেন ৩ হাজার ৩০০ জনের বেশি বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে যাত্রাপথে সাগরে ডুবে মারা গেছেন এক হাজারের বেশি।ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তারা বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে প্রতিবছর যত মানুষ ইউরোপের উন্নত দেশগুলোতে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করছেন, গত প্রায় ছয় বছর ধরে তাদের মধ্যে শীর্ষে আছেন বাংলাদেশিরা।

২০২০ সালে করোনা মহামারীর কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশকারীদের সংখ্যা কম ছিল। এরপরও যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান, সিরিয়া ও উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়া ও মরক্কোর তুলনায় গত বছর বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। দ্য টেলিগ্রাফ সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানকরেছে।তাদের অনুসন্ধানের মূল বিষয়- বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম, প্রতিবছরই জিডিপি বাড়ছে। এমনকি করোনা মহামারীর কারণে ২০২০-২১ সালে প্রতিবেশী দেশ ভারতের জিডিপি যেখানে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হওয়ার শঙ্কা আছে; সেখানে বাংলাদেশের জিডিপি বাড়ার সম্ভাবনা আছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। তা হলে কেন প্রতিবছর হাজার হাজার বাংলাদেশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াচ্ছেন।

ইউরোপে বসবাস করা মানেই উন্নত জীবন- বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর মধ্যে এমন একটি ধারণা বদ্ধমূল থাকাকেই ইউরোপযাত্রার প্রধান কারণ হিসেবে মনে করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম হাসান। বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়ন সংস্থার এই কর্মকর্তা টেলিগ্রাফকে বলেন, বাংলাদেশের সিলেটসহ কিছু জেলার মানুষের মধ্যে একটি বদ্ধমূল ধারণা আছে। সেটি হলো- আপনি যদি কোনোভাবে ইউরোপে যেতে পারেন, তা হলেই জীবনের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে যারা অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের জন্য রওনা হন, তাদের অধিকাংশের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে এবং তাদের একটি বিপুল অংশ লিবিয়া থেকে নৌপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ তথ্য জানিয়ে শরিফুল হাসান বলেন, আমরা এই যুবকদের বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি- এটা কোনো স্বপ্নপূরণের যাত্রা নয়; বরং মৃত্যু অভিমুখে যাত্রা।

কিন্তু তারা এসব কথায় কান দিতে প্রস্তুত নন। তিনি আরও বলেন, যারা কোনোভাবে ইউরোপে অনুপ্রবেশে সক্ষম হয় এবং সেখানে কাজ জোটাতে পারে, তারা দেশে টাকা পাঠায়। সেই টাকায় তার পরিবারের সদস্যরা সচ্ছল জীবনযাপন করে, পাকা ভবন তৈরি করে। অধিকাংশ মানুষ এই চাকচিক্য দেখে প্রভাবিত হয়। কিন্তু বিপুলসংখ্যক অনুপ্রবেশকারী যে যাত্রাপথে মারা যায় কিংবা সেখানে প্রবেশের পর কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে; সেসব ঘটনা এই মানুষেরা গুরুত্ব দেয় না।চট্টগ্রামের বাসিন্দা আলফাই আলি হোসেন সজীব (২৩) জানান তার স্বপ্নভঙ্গের কথা। দ্য টেলিগ্রাফকে তিনি বলেন নির্মাণশিল্পের কাজে যোগ দিতে ক্রোয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য এক দালালকে এককালীন ৬ হাজারেরও বেশি ইউরো (৫ লাখ ৯৭ হাজারেরও বেশি টাকা) দিয়েছিলেন তিনি।কিন্তু দেশটির রাজধানী জাগরেবে যাওয়ার পর ওই দালালচক্রের অন্য সদস্যরা তাকে একটি কক্ষে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের যাত্রীদের সঙ্গে বন্দি রেখেছিল। টেলিগ্রাফকে সজীব বলেন, তারা আমাকে আরও আড়াই লাখ টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছিল। প্রতিদিন তারা আমাকে নির্যাতন করত, মারধর করত এবং খাবারও দিত অনিয়মিত।