এফডিসির ঘটনায় ডিপজল-মিশা সওদাগরের দুঃখ প্রকাশপ্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেনগরমের তীব্রতা কমাতে কী কাজ করেছেন, জানালেন হিট অফিসারবিনা ভোটে নির্বাচিত ৩৩ প্রার্থীসব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেনে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে
No icon

ডলারের বিপরীতে মান হারাচ্ছে টাকা

বাংলাদেশ সাধারণত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করে মার্কিন ডলারে। কিন্তু ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। বর্তমানে দেশে ডলারের দর সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে। গতকাল বুধবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের জন্য সর্বোচ্চ ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা গুনতে হয়েছে। তবে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাংকের বাইরে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে আরও ১০ পয়সা বেশি দরে। এর আগে কখনই এক ডলারের জন্য এত টাকা খরচ করতে হয়নি। গত বছর দেশে করোনা ভাইরাস মহামারীর প্রকোপ শুরু হওয়ার আগে ফেব্রুয়ারিতে ডলারের দর ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সায় উঠেছিল। যা ছিল এ যাবৎকালে ডলারের সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থান। দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই টাকার মান কমেছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতি ডলারের বিনিময়ে পাওয়া যেত ৬৯ টাকা। সেই ডলারের বিনিময় মূল্য এখন ৮৭ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে। অথচ চার বছর আগেও ২০১৭ সালের শুরুর দিকে প্রতি ডলারের মূল্যমান ছিল ৭৯ টাকা ৭৫ পয়সা।বাংলাদেশে ডলার ও টাকার বিনিময় হার স্বাধীনতার পর থেকে সরকার নির্ধারণ করে দিত। টাকাকে রূপান্তরযোগ্য ঘোষণা করা হয় ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ। আর ২০০৩ সালে এই বিনিময় হারকে করা হয় ফ্লোটিং বা ভাসমান। এরপর থেকে আর ঘোষণা দিয়ে টাকার অবমূল্যায়ন বা পুনর্মূল্যায়ন করা হয় না। তবে টাকার বিনিময় হার ভাসমান হলেও পুরোপুরি তা বাজারভিত্তিক থাকেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব সময়ই এতে পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ রেখে আসছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে অনুসরণ করে আসছে ম্যানেজড ফ্লোটিং রেট নীতি।

তবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমা নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, টাকার অবমূল্যায়ন হলে রপ্তানিকারকরা সুবিধা পান, কিন্তু আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতিতে চাপ পড়ার আশঙ্কা থাকে। যদিও আপাতত শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কারণ এটি চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। আমাদের আমদানি কিছুটা বেড়েছে।মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমা স্বাভাবিক। একদিকে কমছে রেমিট্যান্স, অপরদিকে বাড়ছে আমদানি। ফলে দাম বাড়ছে ডলারের। এতে অর্থবাজারে একটা চাপ তৈরি হচ্ছে।গতকাল বেসিক ব্যাংকে ৮৭ টাকা ৩০ পয়সায় প্রতিটি ডলার বিক্রি হয়েছে। জনতা ব্যাংকে বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকায়। এনআরবিসি ব্যাংকে বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায়। অন্যদিকে খোলাবাজারে বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকা ৮০ পয়সায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, রেমিট্যান্স বাড়ায় ও আমদানি কমায় বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে গেছে। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রায় ৮০০ কোটি ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, যা ছিল অতীতের যে কোনো বছরের চেয়ে বেশি। মহামারীর মধ্যে ব্যবসায় মন্দাজনিত কারণে আমদানি কমে যায়। পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন এবং রপ্তানি আয় বাড়ার কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত ডলার জমা হতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে ডলার কেনার এই রেকর্ড গড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫.১৫ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল। গত অর্থবছরের আগে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ ডলার কেনার রেকর্ড।

এদিকে ডলারের বিপরীতে টাকা অবমূল্যায়িত হওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ব্যবসায়ীরা। রপ্তানিকারকরা বলছেন, টাকার মূল্যমান কমায় তারা খুশি। কারণ এতে আগের তুলনায় বেশি আয় হচ্ছে তাদের। কিন্তু এই রপ্তানিকারকদের একটি অংশ যখন আমদানিকারক, তখন আবার বিষয়টি নিয়ে তারা নাখোশ। সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, বাংলাদেশে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হচ্ছে। আবার প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের বড় অংশই আমদানিনির্ভর। তাই টাকার মূল্যমান কমে যাওয়ায় খুব বেশি লাভবান হতে পারছেন না এসব ব্যবসায়ী।বিকেএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা আমদানি-রপ্তানি দুটিই করি ডলারে। আমাদের রেট ঠিক আছে। এতে সমস্যা নেই।