ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে সর্বাত্মক অবরোধ শুরু করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, গতকাল রোববার দুপুর ২টা থেকে অবরোধ শুরুর কথা থাকলেও বেলা ১১টার মধ্যেই তারা রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে আসতে শুরু করেন। দুপুর ২টার পর ইনকিলাব মঞ্চ শাহবাগ মোড় বন্ধ করে দেয়। এতে এই এলাকা দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।সরেজমিন দেখা যায়, শাহবাগ মোড়ের মাঝখানে বসে ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা একটু পরপর স্লোগান দিচ্ছেন। এ সময় মঞ্চের নেতাকর্মীরা আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম উই ওয়ান্ট জাস্টিস দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদি যেই হাদি জনতার, সেই হাদি মরে না স্লোগান দিচ্ছেন।শাহবাগের কর্মসূচিতে নতুন করে চার দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো হাদি হত্যায় জড়িত সবার ২৪ দিনের মধ্যে বিচার, বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয়দের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল, শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ফেরত না দিলে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের আশ্রয় নেওয়া এবং সিভিল-মিলিটারির আওয়ামী লীগের দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করা।
ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে গত শুক্রবার দুপুর থেকে শাহবাগে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা। এতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষও যোগ দিয়েছেন। শনিবার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দেওয়ার পর এলাকা ছাড়েন তারা।রোববার রাত ১০টায় শাহবাগ মোড় ছেড়ে আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, সোমবার (আজ) দুপুর ২টায় বাংলাদেশের যত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসা রয়েছে, স্কুল-কলেজ রয়েছে এবং স্বাধীনতাকামী জনগণ রয়েছে, প্রত্যেককে শাহবাগের হাদি চত্বরে এসে অবস্থান নেওয়ার অনুরোধ রইল। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। লড়াই কঠোর থেকে কঠোর হবে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে অবরোধ ওসমান হাদি হত্যার বিচার দাবিতে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেছে ছাত্র-জনতা। রোববার বিকেল ৩টায় বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল-সংলগ্ন মহাসড়কের জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয় তারা। এর পর থেকে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুই পাশে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ইনকিলাব মঞ্চ, ব্রজমোহন কলেজ, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
এদিকে সিলেটে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। রোববার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর চৌহাট্টা মোড়ের এক অংশে ইনকিলাব মঞ্চ সিলেট এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় আম্বরখানা, রিকাবীবাজার ও নয়াসড়কগামী রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়। গতকাল দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও নগরীর তালাইমারী মোড়ে পৃথক দুটি কর্মসূচি পালন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মহাসড়ক অবরোধ করে এক দল শিক্ষার্থী। তালাইমারীতে এই কর্মসূচি পালন করে রুয়েট ও স্থানীয় এক দল শিক্ষার্থী।ওসমান হাদির হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অনশন শুরু করেছেন পাঁচ জুলাইযোদ্ধা। রোববার দুপুর থেকে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভবনের সামনে তারা অনশন শুরু করেন। এতে অংশ নিয়েছেন মো. হুজাইফা, নূরুজ্জামান নাবিল, সীমান্ত, জাকিয়া আক্তার ও মিহিরিমা তাসনিম। এ ছাড়া বিকেল ৪টায় নগরীর শিববাড়ী মোড়ে বিক্ষুব্ধ খুলনাবাসীর ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির একাংশ, আপ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী অবস্থান নেন।
ময়মনসিংহে অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। ইনকিলাব মঞ্চের ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধা ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। দুপুর আড়াইটার দিকে নগরের টাউন হল মোড় এলাকায় ইনকিলাব মঞ্চের অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে বিকেল সোয়া ৪টা থেকে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এতে মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন।গাজীপুরের টঙ্গীতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ইনকিলাব মঞ্চ ও বিপ্লবী ছাত্র-জনতা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মহাসড়কের টঙ্গী কলেজগেট এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়।নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছে ছাত্র-জনতা। দুপুর ৩টা থেকে মহাসড়কে বাঁশ ফেলে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। অবরোধের কারণে সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড, কাঁচপুর ও সানারপাড় এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, বিকেল ৫টার আগেই বুঝিয়ে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছি।হাদি হত্যার বিচার দাবিতে চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতু অবরোধ করেন ইনকিলাব মঞ্চের কর্মী-সমর্থকরা। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তারা সড়ক থেকে সরে গেলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার, বান্দরবানসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এ ছাড়া দুপুর ২টার পর শাহ আমানত সেতুর মুখে গোলচত্বরের আশপাশে ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীরা সড়ক অবরোধ করেন।