এক বছরের বেশি সময় পার হলেও পুনর্গঠন করা হয়নি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ফলে পরিচালনা কমিটি ছাড়াই চলছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। গত বছর ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সদস্যরা গত ৭ নভেম্বর পদত্যাগ করেন। এরপর দীর্ঘ সময় আর এই পদগুলো পূরণ করা হয়নি। ফলে এই প্রতিষ্ঠানটি এখন অকার্যকর রয়েছে।গতকাল আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ -এর সংশোধিত গেজেট জারি করা হয়েছে। এতে নতুনভাবে জাতীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিভাগ গঠন, স্বাধীন বাজেট, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং স্বাধীনতা বঞ্চিত ব্যক্তিদের সুরক্ষায় বিস্তৃত ক্ষমতা যুক্ত করা হয়েছে।কমিশনকে সক্রিয় করতে আইন সংশোধনের জন্য গত ১০ নভেম্বর জারি করা হয় অধ্যাদেশটি। কিন্তু এখনও কমিশন পুনর্গঠন হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আজ ১০ ডিসেম্বর পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। বাংলাদেশেও দিবসটি পালনে কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার আমাদের প্রতিদিনের অপরিহার্য বিষয় এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে সারাদেশে উদযাপিত হবে দিবসটি। দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, মানববন্ধন ও রj;্যালি।কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কমিশনে সব মিলিয়ে এক হাজারের বেশি অভিযোগ নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। এর মধ্যে রয়েছে হত্যা, ধর্ষণ, পারিবারিক ও নারীর প্রতি সহিংসতা, নিখোঁজ, গুম, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, বিচারবহির্ভূত হত্যা, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও বিনা বিচারে আটকের অভিযোগ।
কমিশন কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য রাজধানীর কারওয়ান বাজার কমিশন কার্যালয়ে রয়েছে পৃথক দুটি বেঞ্চ। চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি ফুল বেঞ্চ বর্তমানে কার্যকর না থাকায় কমিশনে কোনো সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও দীর্ঘদিন কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত বা বিবৃতি দিতে পারছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের সচিব সেবাস্টিন রেমা সমকালকে বলেন,কমিশনের মূল কাজ করার এখতিয়ার আমাদের নেই। চেয়ারম্যান ও সদস্য থাকলে কমিশনের সব কাজই সহজ হতো। তারা না থাকায় কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। কমিশনের পরিচালক কাজী আরফান আশিক বলেন,জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অধ্যাদেশ জারি করা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের যুগান্তকারী কাজ। এর ফলে কমিশন আরও শক্তিশালী হবে এবং স্বাধীনভাবে জনগণের মানবাধিকার রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। অপরাধের দায়মুক্তি পাবেন না বাহিনীর সদস্যও কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই এখন থেকে গোপন আয়নাঘর বা যে কোনো আটক কেন্দ্র পরিদর্শন করতে পারবেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এসব বিধান রেখে গতকাল অধ্যাদেশের চূড়ান্ত গেজেট জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা বা যে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সন্দেহভাজন হিসেবে জড়িত থাকলেও তা তদন্ত করতে পারবে কমিশন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ওপরের নির্দেশ বলে অপরাধের দায়মুক্তি পাবেন না সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কোনো সদস্য। অধ্যাদেশে নতুন খসড়া অধ্যাদেশটি বিদ্যমান ২০০৯ সালের আইন প্রতিস্থাপন করবে। কমিশন একটি সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন সংস্থা হবে। তা সরকারের কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অধীন হবে না।