NEWSTV24
দ্রুত ভাঙা হবে সরকারি বেসরকারি ২৩টি ভবন
বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:১৩ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

দ্রুত ভাঙা হবে সরকারি ও বেসরকারি ২৩টি বহুতল ভবন। ডেঞ্জার জোনে থাকা সিলেটে ভূমিকম্পের প্রস্তুতি বলতে আপাতত এই। ভূমিকম্প নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনার মধ্যে সম্প্রতি এক জরুরি সভায় এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে সিলেটের প্রশাসন। এর আগে ২০১৯ সালে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম জানান, ঝুঁকিতে থাকা এসব ভবন আগামী সপ্তাহেই ভাঙার কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া ২৪ নভেম্বর সিটি করপোরেশনের জরুরি সভায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনপদ সিলেট দাঁড়িয়ে আছে সক্রিয় ডাউকি ফল্টের ওপর। ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত অন্তত সাতটি ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে এই ফল্টে। এ ছাড়া বাংলাদেশের চারপাশে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত প্লেট বাউন্ডারি-২ (নোয়াখালী থেকে সিলেট) ও প্লেট বাউন্ডারি-৩ (সিলেট থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল) সিলেটকে ফেলেছে ভূমিকম্পের রেড জোনে । জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সকর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেটে ভূমিকম্প নিয়ে উচ্চপর্যায়ের কোনো জরিপ হয়নি। দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থানীয়ভাবে চালানো জরিপের সুপারিশগুলোর দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেন না কেউ। ফলে নগরীর বেশির ভাগ ভবনে ফায়ার সার্ভিসের বাধ্যতামূলক সনদও নেই। খোদ নগর ভবনেরও নেই এই সনদ।

বাস্তবতা হচ্ছে, ভূমিকম্পের দুর্যোগ মোকাবিলায় সিলেট অঞ্চলের কার্যত কোনো প্রস্তুতি নেই। পুরনো ও দুর্বল ভবনের সাথে প্রতি বছরই যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন বহুতল ভবন। বিল্ডিং কোড উপেক্ষা করে গড়ে ওঠা এসব ভবন ভূমিকম্প দুর্যোগের সময় মৃত্যুফাঁদ হয়ে ওঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমেদের মতে, মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেও সিলেটে বহু স্থাপনা ধসে পড়তে পারে। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে করা একটি জরিপের তথ্য মতে, সিলেটের প্রায় ৪২ হাজার ভবনের বেশিরভাগই পুরনো ও দুর্বল। ৬০ শতাংশ নতুন ভবনেও মানা হয়নি ন্যূনতম নির্মাণ বিধিমালা।সিলেট সিটি করপোরেশনের তালিকায় থাকা অতি ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো ভবনগুলো হলো কালেক্টরেট ভবন-৩, সমবায় ব্যাংক ভবন মার্কেট, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয়, পাঠানটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৌকিদেখী ৫১/৩ সরকারি ভবন, রাজা ম্যানশন, মধুবন মার্কেট, সুরমা মার্কেট, সিটি সুপার মার্কেট, মিতালী ম্যানশন, পৌর বিপণি ও শপিং সেন্টার, আজমীর হোটেল, মান্নান ভিউ, শুভেচ্ছা-২২৬, নবপুষ্প-২৬/এ, কিবরিয়া লজ, মিতালী-৭৪, মেঘনা-এ-৩৯/২, ওয়ারিছ মঞ্জিল, হোসেইন মঞ্জিল, শাহনাজ রিয়াজ ভিলা, নূরানি-১৪ এবং লেচুবাগান এলাকার প্রভাতী ও শ্রীধরা হাউস।

২০২১ সালে ২৪ ঘণ্টায় সাত দফা ভূমিকম্পর অনুভূত হয় সিলেটে। সেই বছরের মে মাসে ১০ দিনে ২০টি ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর নগরীর সুরমা মার্কেট, সিটি সুপার মার্কেট, মধুবন সুপার মার্কেট, সমবায় মার্কেট, মিতালী ম্যানশ্যান ও রাজা ম্যানশন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় প্রশাসন। কয়েক দিন বন্ধ রেখে কোনোরকম সংস্কার ছাড়াই ভবনগুলোয় আবার স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে।ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলামের মতে পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সঙ্গে নতুন অপরিকল্পিত ভবন সিলেটের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি। তবে সবচেয়ে ভোগান্তিতে ফেলবে সিলেটের আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকার সরু রাস্তা। বড় ধরনের ডিজাস্টারে এগুলো উদ্ধার অভিযান বাধাগ্রস্ত করবে।বিগত কয়েক বছর ধরে নগর পরিকল্পনা বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজ করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও পুর প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম। তিনি বলেন, বড় দুর্যোগ মোকাবিলায় সিলেটের মাত্র ৩০-৪০ শতাংশ সক্ষমতা আছে। এখানে জলাশয় ভরাট করে বা টিলা কেটে আবাসিক এলাকা ও হাইরাইজ বিল্ডিং হচ্ছে। এসব এলাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

জহির আলম বলেন, সিলেটে একটি ডিজাস্টার সেন্টার হয়েছে। সেটিতে যন্ত্রপাতি ও লোকবল বাড়াতে হবে। ভূমিকম্প হলে যাতে মানুষ নিরাপদ স্থানে যেতে পারে, সেজন্য নগরীতে বৃহৎ খালি জায়গাও প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন।এদিকে দুর্যোগ মোকাবিলায় জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি উদ্ধারকাজের জন্য আরও যন্ত্রপাতি কেনার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে বলে জানান সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ ও সংস্কারে এবার আর দেরি করা হবে না। উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে সেগুলো ভাঙা হবে।উল্লেখ্য, সিলেটে ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে পাঁচ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। ওই সময় মাটির সঙ্গে মিশে যায় বহু বাড়িঘর।