NEWSTV24
বড় হচ্ছে এলপিজি বাজার
রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:২৪ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

দেশের বাজারে দ্রুত বাড়ছে এলপিজির (লিকুইফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) ব্যবহার। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে গাড়ি, শিল্প কারখানা- সর্বত্রই বাড়ছে এর ব্যবহার। বিশেষ করে পাইপলাইনে গ্যাসের সংযোগ বন্ধ থাকায় শিল্প কারখানাসহ আবাসিকে গ্যাসের সংকটে গ্রাহকরা এলপি গ্যাসের দিকে ঝুঁকছেন। আমদানিনির্ভর এই গ্যাসের ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়লেও এর উৎপাদন বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই সরকারি পর্যায়ে। গত দুই দশকে এলপিজির ব্যবহার কয়েকগুণ বাড়লেও এখনও বছরে মাত্র ২০ হাজার টন এলপিজি উৎপাদনে সীমাবদ্ধ সরকার। অথচ বর্তমানে দেশে এলপিজির ব্যবহার বছরে ১৫ লাখ টন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকারি উদ্যোগে এলপিজি উৎপাদন না বাড়ায় বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি ও সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে বাজার ও দাম নির্ধারণ সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই।এলপি গ্যাস নামে সরকারের একটি কোম্পানি আছে। বছরে সেখান থেকে ২০ হাজার টন বোতলজাত গ্যাস উৎপাদন করা হয়। আবার সেই গ্যাসের ৮০ শতাংশই সরকারের একটি বাহিনীকে সরবরাহ করা হয়। বাকি ২০ শতাংশ ডিলাররা পান, যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। এদিকে গত দুই দশকে দেশে এলপিজির বাজার বছরে ১৫ লাখ টনে পৌঁছেছে। দিন দিন এর ব্যবহার আরও বাড়ছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০৩০ সালে এলপিজির ব্যবহার ২৫ লাখ টনে পৌঁছবে। সেই হিসাবে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেশে এলপিজির চাহিদা আরও ১০ লাখ টন বা ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। অথচ সরকারের উদ্যোগে এখনও তেমন কোনো বড় কারখানা তৈরি করা হয়নি। এমনকি প্রায় দুই-তিন দশক আগের পুরনো কারখানাও সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, সরকার বেশ কয়েকবার চটগ্রামের পতেঙ্গায় ও টাঙ্গাইলে এলপিজি কারখানা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কার্যত সেগুলো স্থবির হয়ে আছে। সর্বশেষ পতেঙ্গায় এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।দেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এলপিজির ব্যবহার ছিল ৭ লাখ টন। পরের অর্থবছরে সাড়ে ৮ লাখ টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে সাড়ে ১০ লাখ টনে উন্নীত হয়। পর্যায়ক্রমে চাহিদা বেড়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হয় প্রায় ১৫ লাখ (১ দশমিক ৪৪) টনের কাছাকাছি। দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ এলপিজির চাহিদা তৈরি হচ্ছে, তার ৯৮ শতাংশই আসছে বেসরকারিভাবে। মাত্র ২ শতাংশ এলপিজি সরকারিভাবে সরবরাহ হচ্ছে। এ খাতে ৫৮টি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নিলেও মাত্র ২৭টি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে এলপিজি অপারেটর হিসেবে কাজ করছে।বাংলাদেশ পেট্রোলিয়ম করপোরেশনের (বিপিসি) এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয়ে নীতিনির্ধারণী মহল থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বাস্তবায়নের তাগিদ দিতে হয়। আমরা শুধু বাস্তবায়ন করতে পারি। তিনি বলেন, বাস্তবতা হলো- সরকারের অনেক কিছু বেসরকারি মালিকরা নিয়ন্ত্রণ করেন। রহস্যজনক কারণে দেশের এলপিজি বাজার দিন দিন বিস্তৃত হলেও এ খাতে নতুন কারখানা করার কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, আমাদের দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্বৃত্তায়ন পুরনো চিত্র। ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত পরিকল্পনাই সরকার বাস্তবায়ন করে। সরকারের হাতে এমন কিছু থাকা উচিত, যাতে বেসরকারি খাতের একচেটিয়া কারবার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এলপিজি খাত যেহেতু দিন দিন সম্প্রসারণ হচ্ছে। ফলে সরকারে অধীনে একটি বড় অংশ থাকতে পারে।এদিকে রাজধানীতে এলপিজি খাত নিয়ে সাম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে বলা হয়েছে- ২০৪১ সালে এলপিজির চাহিদা ৫০ লাখ টনে উন্নীত হবে।এলপি গ্যাসের বাজার নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেছেন, এলপিজি খাতে নতুন বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।