তিন দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গতকাল পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা রাজধানীর শাহবাগ থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার করে। এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এলাকায় তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন লোকজন।পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউনকর্মসূচি ঘোষণা করেছে প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন। গতকাল রাতে শিক্ষার্থীদের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বৈঠক কোনো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়। আজ তারা আবার আলোচনায় বসবেন।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে প্রকৌশলী লিখতে না দেওয়াসহ তিন দাবিতে আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন বুয়েটসহ বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে শাহবাগ মোড় হয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আশপাশের এলাকায়ও তীব্র যানজট দেখা দেয়। দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি লংমার্চ টু ঢাকা থেকে যমুনা ঘেরাও করতে রওনা হন। তখন পুলিশ বাধা দেয়। সংঘর্ষে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে আন্দোলনকারীরা জানান। আট পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর।এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে তিন দফা দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যার দিকে তারা লংমার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করে সেদিনের মতো আন্দোলনের সমাপ্তি টানেন। গতকাল সকালে প্রথমে বুয়েট ক্যাম্পাসে জড়ো হন তারা। বুয়েটের প্রধান গেটের সামনের শহীদ মিনার এলাকা থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। পরে মিছিল নিয়ে এসে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে যমুনার দিকে রওনা হন।
দুপুরে সরকার তাদের দাবির বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে। তবে সেটি অনুপযুক্ত দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। তাদের তিন দাবি ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে প্রকৌশলী উপাধি ব্যবহার বন্ধ, কাউকে পদোন্নতি দিয়ে নবম গ্রেডে উন্নীত না করা এবং দশম গ্রেডে চাকরিক্ষেত্রে স্নাতক প্রকৌশলীদের যোগ্যতার ভিত্তিতে সুযোগ দেওয়া। রাত ৮টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা এই তিন দফার সঙ্গে আরও তিন দাবি যুক্ত করেন। সেগুলো হলো সরকার গঠিত অনুপযুক্ত কমিটি পুনর্গঠন; শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করায় পুলিশের উপকমিশনারকে ক্ষমা প্রার্থনা এবং সংশ্লিষ্ট তিন উপদেষ্টাকে শাহবাগে আসতে হবে। এর আগে বিকেলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর হামলা চালানোয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ক্ষমা চাওয়ারও দাবি জানান। সন্ধ্যার দিকে শাহবাগ মোড়ে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য প্রতীকী জানাজা পড়েন।
যানজটে ভোগান্তি
শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করায় রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের মানুষ। দুপুরে পল্টন, কাকরাইল, মৎস্য ভবন, রাজু ভাস্কর্য, নীলক্ষেত, কাঁটাবন, কারওয়ান বাজার ও মগবাজার এলাকায় ঘুরে দেখা যায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি। বেশি ভোগান্তিতে পড়েন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বারডেম হাসপাতালের উদ্দেশে আসা রোগীরা।
ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ডাক
আজ বৃহস্পতিবার দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ওয়ালী উল্লাহ। তিনি জানান, তাদের দাবি মানা না হলে আজ বিকেল ৫টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। রাত সাড়ে ১০টায় কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণার পর শাহবাগ ছেড়ে যান আন্দোলনকারীরা।