NEWSTV24
গাজায় মানবিক বিরতি ঘোষণার পরও চলছে ইসরায়েলের হামলা
সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫ ১৬:০১ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

গাজায় খাদ্য সংকট ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। উপত্যকার বিপুল সংখ্যক মানুষকে দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। অপুষ্টিতে প্রতিদিন শিশুসহ নারী-পুরুষের মৃত্যু হচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্বনেতাদের তীব্র সমালোচনার পর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কিছু অংশে মানবিক বিরতির ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। পাশাপাশি বিমান থেকে মানবিক সহায়তা ফেলা শুরু এবং নতুন ত্রাণ করিডোর চালুর অনুমতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, একদিকে গাজায় খাদ্য সংকট মোকাবিলায় নানা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিলেও অন্যদিকে নির্বিচার হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার দেশটি। গতকাল রোববার ভোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ৫৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অনাহারে মারা গেছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় কমপক্ষে ৫৯ হাজার ৭৩৩ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।যুদ্ধবিরতি ভেঙে গত ২ মার্চ গাজার ওপর পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল। মে মাসের শেষ দিকে দেশটি আবার স্বল্প পরিমাণে ত্রাণ সরবরাহ চালু করার অনুমতি দেয়। ত্রাণ সরবরাহের পথ সহজ করার সিদ্ধান্ত এমন সময় দেওয়া হলো, যখন ইসরায়েলি হামলায় ও গুলিতে ৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গাজার মধ্যাঞ্চলের আল-আওদা ও আল-আকসা হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোববার ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় থাকা মানুষের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিবর্ষণে কমপক্ষে ১৭ জন নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়েছেন। একই দিন অবরুদ্ধ গাজাবাসীর জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের একটি জাহাজকে বাধা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় অপুষ্টিতে কয়েক ডজন গাজাবাসী মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টির কারণে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে অপুষ্টি ও ক্ষুধায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৩৩-এ দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ৮৭ শিশু রয়েছে।ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে, গাজা উপত্যকায় ত্রাণ পাঠানোর চলমান উদ্যোগের অংশ হিসেবে তারা আকাশ থেকে এক দফা ত্রাণসামগ্রী ফেলার কাজ সম্পন্ন করেছে। এর আগে দেশটি জানায়, রোববার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ ও গাজা সিটিতে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের সামরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখবে। পাশাপাশি উপত্যকায় নতুন ত্রাণ করিডোর চালুর অনুমতি দেবে, যেখানে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ছবি বিশ্বকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। রোববার থেকে সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহকারী কনভয়গুলোর জন্য নির্ধারিত নিরাপদ রুটও থাকবে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, নির্ধারিত এলাকায় বিরতির সময় আমাদের কর্মীরা ক্ষুধার্ত গাজাবাসীকে খাওয়ানোর প্রচেষ্টা জোরদার করবেন।মিসরীয় রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তারা রোববার কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে দক্ষিণ গাজায় ১ হাজার ২০০ টনেরও বেশি খাদ্য সহায়তা বহনকারী শতাধিক ট্রাক পাঠাচ্ছে।জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও বিমান থেকে উপত্যকায় ত্রাণ সহায়তা ফেলেছে। জর্ডানের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত কয়েক মাসের মধ্যে প্রথম বিমান থেকে প্যারাসুটে ২৫ টন সাহায্য পাঠিয়েছে।তবে বিমান থেকে ত্রাণ ফেলাকে অদ্ভুত বিভ্রান্তি বলে সতর্ক করেছেন ত্রাণ বিতরণ সংস্থাগুলো। এই ব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান অনাহারের সংকট নিরসনে কোনোভাবেই কার্যকর নয় বলে জানিয়েছে তারা। ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির কিয়ারান ডনেলি বলেন, বিমান থেকে ত্রাণ ফেলা প্রয়োজনীয় পরিমাণ বা গুণগত মানের ত্রাণ সরবরাহ করতে পারে না।এদিকে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজার এক-তৃতীয়াংশ ফিলিস্তিনি চার দিন ধরে কিছু খায়নি। সংস্থাটি একটি বিবৃতিতে বলেছে, উপত্যকার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।