NEWSTV24
১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পাসের হার
শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫ ১৫:০৭ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

এএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২০০১ সালে গড় পাসের হার ছিল ৩৫.২২ শতাংশ। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯১.৩৪ শতাংশ, যা ২০০১ থেকে ২০২৪ সময়কালের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশেষ করে ২০১০ থেকে গত বছর পর্যন্ত মাধ্যমিকে পাসের ৮০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। পাসের হারে উত্থানের এই ধারা এবার হোঁচট খেয়েছে। এ বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার নেমে এসেছে ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশে, যা গত ১৫ বছরে সর্বনিম্ন। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি মনে করে, বাড়তি বা গ্রেস নম্বর না দেওয়ায় এবারের ফলই প্রকৃত ফল। বাস্তব কারণ যাই হোক, শিক্ষাবিদরা মনে করেন, গত আড়াই দশকে পাসের হারে এই বড় ধরনের ওঠানামা শিক্ষায় নীতি পরিবর্তন এবং আর্থ-সামাজিক বাস্তবতারই প্রতিফলন। তারা বলেন, ঘন ঘন নীতি-পদ্ধতি পরিবর্তনের কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্ট হয়, সে কারণেই পরীক্ষার ফলে উত্থান-পতন ঘটে।এ বছর মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পাস করেছে মাত্র ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। এর অর্থ, প্রতি ১০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় তিনজন অকৃতকার্য হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ পয়েন্ট, যা একটি বড় ধাক্কা।

বছরওয়ারি বিশ্লেষণ : ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সময়টি তুলনামূলকভাবে নিম্ন পাস হারের। ২০০৫ সাল থেকে কিছুটা বৃদ্ধি লক্ষ করা গেলেও এটি ছিল অনিয়মিত। এরপর ২০০৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে পাসের হার বেড়েছে। ২০১০ সাল থেকে পর পাসের হার ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ২০১৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত- এই পর্বে পাসের হার কিছুটা ওঠানামা করলেও গড় হার ৮০ শতাংশের আশপাশেই থাকে। ২০২০ সালের পাসের হার ব্যক্তিক্রম ছিল বলে এই হিসাবে আসে না। কারণ কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে অভূতপূর্বভাবে পাসের হার ছিল ১০০ শতাংশ। ওই ফল ছিল একটি ব্যতিক্রমী অবস্থা এবং নিয়ন্ত্রিত মূল্যায়ন।২০২৫ সালে আবার হঠাৎ হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ৬৮.৪৫ শতাংশ, যা নতুন করে ভাবনার উদ্রেক করছে। এটি প্রকৃত ফল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির।

তবে সাবেক একজন বোর্ড চেয়ারম্যান নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ;২০১০ সালে প্রথমবার ৭৯.৯৮ শতাংশ পাসের হার ছিল, যা শিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কারের ইঙ্গিত দেয়। ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ সাধারণ পদ্ধতিতে পাসের হার ৯১.৩৪ শতাংশ। ২০২০ সালে মহামারির কারণে সরাসরি পরীক্ষা না নিয়ে ১০০ শতাংশ পাস ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০২৫ আগের বছরের তুলনায় আশানুরূপ পতন মাত্র ৬৮.৪৫ শতাংশ। তিনি বলেন, এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগ, সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি, শিক্ষকের প্রশিক্ষণ এবং পরীক্ষাব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর- এসবই পাসের হারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে ২০২৫ সালের পতনটি শিক্ষা কাঠামোর ওপর ছাত্রদের প্রস্তুতি ও মানসম্মত পাঠদানের চ্যালেঞ্জের দিকেও ইঙ্গিত করে।

মাধ্যমিকের ফলাফলে উত্থান-পতনের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ২০০১-২০২৫ সময়কালের পাসের হার পরিবর্তনের ধারা শুধু সংখ্যাতাত্ত্বিক নয়, বরং এটি একটি জাতির শিক্ষাগত অভিযাত্রার প্রতিচ্ছবি। গড় পাসের হার বৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হলেও হঠাৎ পতন বা উল্লম্ফন শিক্ষায় ভারসাম্যহীনতার দিকেও ইঙ্গিত করে। ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত ও টেকসই শিক্ষানীতি, যাতে মান ও মূল্যায়ন পদ্ধতি আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর হয়। এ বছরের ফলই প্রকৃত ফল : চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় কাউকে গ্রেস মার্কস বা বাড়তি নম্বর দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির। তিনি বলেন, যে ফলাফল আমরা প্রকাশ করলাম, এটি প্রকৃত ফল। এবার কোনো ধরনের বাড়তি নম্বর বা গ্রেস মার্কস কাউকে দেওয়া হয়নি। মেধার প্রকৃত মূল্যায়নের শতভাগ প্রচেষ্টা করা হয়েছে। পরীক্ষকদেরও সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। ফলে এটিই প্রকৃত ও সত্য ফলাফল। এ নিয়ে সন্দেহ-সংশয় ও ক্ষোভের সুযোগ নেই। আমাদের ফলে শহর গ্রামের একটা পরিবর্তন দেখছি। এতে শহর থেকে গ্রামের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে তাদের ফলে।