NEWSTV24
বিএনপিকে আনুপাতিক উচ্চকক্ষে রাজি করাতে পিআর পদ্ধতির চাপ
রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫ ১৫:৪৭ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

বিএনপির ওপর চাপ তৈরির কৌশল হিসেবে ভোটের অনুপাতে (পিআর) সংসদ নির্বাচনের দাবি তুলেছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল। আনুপাতিক নির্বাচন না চাইলেও এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিও এ দাবিতে সমর্থন দিচ্ছে। ভোটের অনুপাতে প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের প্রস্তাবে বিএনপিকে রাজি করাতেই এই চাপ তৈরি করা হচ্ছে বলে দলগুলোর সূত্রে জানা গেছে।সংস্কারের চলমান সংলাপে দরকষাকষির কৌশল হিসেবে সংসদের নিম্নকক্ষে প্রচলিত আসনভিত্তিক নির্বাচনের পরিবর্তে পিআর পদ্ধতির দাবি তুলেছে তারা। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের প্রস্তাব বিএনপি মেনে নিলে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্য দলগুলো নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির দাবি থেকে সরে আসবে। আনুপাতিক উচ্চকক্ষ না হলে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি না হওয়া কিংবা নির্বাচন বর্জনের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে দলগুলোর।প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে। এতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল রাজি হয়েছে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, নিম্নকক্ষের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৪০০ করা হবে। উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসনের। ৪০০ আসনের নিম্নকক্ষে বিদ্যমান ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট (এফপিটিপি) পদ্ধতিতেই নির্বাচন হবে। রাজনৈতিক দলের এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটে লড়বেন। যিনি বেশি ভোট পাবেন, তিনি জয়ী হবেন। নিম্নকক্ষের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যত শতাংশ ভোট পাবে, উচ্চকক্ষেও ততগুলো আসন পাবে। অর্থাৎ, কোনো দল নির্বাচনে ১০ শতাংশ ভোট পেলে, উচ্চকক্ষে ১০টি আসন পাবে।জামায়াত, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল এই প্রস্তাবে রাজি। কিন্তু বিএনপি রাজি হয়নি। দলটি চায়, বর্তমানে সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন যেভাবে নির্ধারণ হয়, উচ্চকক্ষের আসনও সেভাবে বণ্টন করা হবে।ঐকমত্য কমিশন এবং অন্যান্য দল মনে করে, বিএনপির প্রস্তাব মানলে সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। সরকারি দল যাতে চাইলেই সংবিধান বদল করতে না পারে, তার জন্য আনুপাতিক উচ্চকক্ষের প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সমকালকে বলেছেন, উচ্চকক্ষের আসনবিন্যাস নিম্নকক্ষের অনুরূপ হলে দ্বিকক্ষের সংসদ অর্থহীন হয়ে যায়। কেন আনুপাতিক উচ্চকক্ষ চায় দলগুলো ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আসন পায় ২৩২টি। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় দলটি ২০১১ সালে সংবিধানের বড় রদবদল করে। বাদ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।ভোটের অনুপাতে প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ থাকলে ৪৯ শতাংশ ভোট পাওয়া আওয়ামী লীগ সেখানে বড়জোর ৫০টি আসন পেত। তখন সংবিধান সংশোধনে সংসদের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশের বাধ্যবাধকতার কারণে আওয়ামী লীগের পক্ষে একা পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করা সম্ভব হতো না। বিরোধী দল বিএনপির সমর্থন প্রয়োজন হতো।

ক্ষমতাসীন দল যেন এককভাবে সংবিধান পাল্টে ফেলতে না পারে, সে জন্যই জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ দলের মধ্যে ২২টি আনুপাতিক উচ্চকক্ষ চাচ্ছে। বিএনপিসহ পাঁচটি দল এটা চায় না।বিএনপি মনে করে, নির্বাচনে কোনো দল দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেলে উচ্চকক্ষেও তার আসন হবে দুই-তৃতীয়াংশ। তারা মনে করে, আগের মতো দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সরকারি দলের হাতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা থাকা উচিত। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, সংবিধান সংশোধনের পথ এভাবে (ভোটের অনুপাতে আসন) বন্ধ করা উচিত না। এতে রাষ্ট্রের জন্য জরুরি সংশোধনী আনা দুরূহ হবে।