NEWSTV24
সাগরে বেড়েছে পানির উচ্চতা, কাজে আসছে না পুরোনো বাঁধ
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫ ১৫:১৪ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রের পানি প্রবেশ রোধে ২০১৩ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল ৬ মিটার উচ্চতার বেড়িবাঁধ। পরবর্তী কয়েক বছর বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে গ্রাম ও ফসলের মাঠে আর সাগরের পানি প্রবেশ করেনি। এখন সামান্য বৃষ্টি ও বন্যাতেই বাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে লবণাক্ত পানি। পানিবন্দি হচ্ছে লাখো মানুষ। পাশাপাশি শত শত হেক্টর ফসলের মাঠ ডুবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষক। এক যুগের ব্যবধানে সমুদ্রপৃষ্ঠের পাশাপাশি উপকূলে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়েছে। এ ছাড়া বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে আগের তুলনায় পানির উচ্চতা বেশি থাকছে ৩ থেকে ৫ ফুট। এতে পুরোনো বেড়িবাঁধ আর কাজে আসছে না। সমুদ্রের পানি প্রবেশ রোধে আরও উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি।টেকনাফের মতো চট্টগ্রামের উপকূলীয় অধিকাংশ এলাকার চিত্র একই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) চট্টগ্রাম ভূপৃষ্ঠ পানিবিজ্ঞান শাখার গবেষণায়ও এর প্রমাণ মিলেছে। চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত ৩০০ কিলোমিটার উপকূলে ২০২৪ সালজুড়ে এ বিষয়ে জরিপ চালানো হয়।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১২-১৩ সালে মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপকূলে সাগরের পানির উচ্চতা ৬ মিটার পর্যন্ত উঠতে দেখা যেত। তবে ২০২৪ সালে এটি সাড়ে ৭ মিটার পর্যন্ত বাড়তে দেখা গেছে। একটি পয়েন্টে ৮ মিটারও পাওয়া গেছে। কক্সবাজারের টেকনাফ ও চকরিয়া উপকূলে একই ধরনের তথ্য মিলেছে। সব মিলিয়ে ১৮৩ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও ধীরে ধীরে বাড়ছে।এই গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম পাউবো এরই মধ্যে বেড়িবাঁধের উচ্চতায় পরিবর্তন এনেছে। আগে ৬ মিটার উচ্চতার বাঁধ দিলেও ২০২৪ সাল থেকে সাড়ে ৭ মিটার থেকে ৯ মিটার করছে পাউবো। মিরসরাই উপকূলে এরই মধ্যে ৯ মিটার উচ্চতার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। উচ্চতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বড় আকৃতির টেকসই ব্লকও ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁধ নির্মাণে।

সাগরের পানির উচ্চতার তুলনায় বাঁধ নিচু হয়ে যাওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় এখন অল্পতেই লবণাক্ত পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে স্থানীয়রা দুর্ভোগ পোহানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষতিরও শিকার হচ্ছে।ভূপৃষ্ঠ পানিবিজ্ঞান সার্কেল চট্টগ্রামের প্রকৌশলী ইমরান হাসান বলেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে এক যুগের ব্যবধানে সাগরের পানির উচ্চতার ভারসাম্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। পানির উচ্চতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকায় উপকূলের বিপদ বাড়ছে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও বাঁশখালী উপকূলে এখন ৯ মিটার উচ্চতার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হচ্ছে। পতেঙ্গা সমুদ্র উপকূলে শহর রক্ষার অংশ হিসেবে ১০ মিটার উচ্চতার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সীতাকুণ্ড উপকূলে ৯ মিটার উচ্চতার বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে।পরিবেশবিদ ও গবেষক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, আমরা প্রকৃতির যে ক্ষতি করছি, প্রকৃতি তা আমাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। সাগর ও কর্ণফুলী নদীর পানি বৃদ্ধি তা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।