রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পর্যায়ে এসে ঝরে পড়েছে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ছেলেরা নানা কাজ কিংবা ছোটখাটো চাকরির সন্ধানে চলে যাওয়া এবং মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়াকে এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা। আগামী ২৬ জুন সারাদেশে শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। রাজশাহী বোর্ডের অধীনে এবার নিয়মিত ও অনিয়মিত মিলিয়ে মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬১৩ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। এর মধ্যে ছাত্র ৬৮৭ হাজার ৯৬০ জন। আর ছাত্রী ৬৪ হাজার ৬৫৩ জন।গত বছরের তুলনায় এবার এইচএসসির পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। গতবার অনিয়মিত ও নিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৭ জন। সে হিসাবে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ৪ হাজার ৫৪৪ জন। রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার ৭৫৫ কলেজের পরীক্ষার্থীরা মোট ২০৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় বসবে।
শিক্ষা বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৫৯ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৭৫ হাজার ২০৬ জন। আর ছাত্রী ৭৭ হাজার ৬৫৩ জন। তবে এইচএসসি পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৩০৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৫৬ হাজার ৩৭০ ও ছাত্রী ৫৭ হাজার ৯৩৫ জন। এবার ৩৮ হাজার ৫৫৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য নাম নিবন্ধন করেনি। এর মধ্যে ছাত্র ১৮ হাজার ৮৩৬ ও ছাত্রী ১৯ হাজার ৭১৮ জন। এই শিক্ষার্থীরাই ঝরে পড়েছেন। ছাত্রদের ঝরেপড়ার হার ২৫ দশমিক ০৫ শতাংশ। ছাত্রীদের ঝরেপড়ার হার ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ঝরেপড়ার গড় হার ২৫ দশমিক ২২ শতাংশ। গত বছর শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়ার হার ছিল ২৩ দশমিক ৭০ শতাংশ।
কেন শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে?- এমন প্রশ্নে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ ন ম মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, এসএসসি পাসের পর সবাই ভর্তি হয়। ভর্তির পর অনেক দরিদ্র ছেলেমেয়ে গার্মেন্টসের মতো ছোটখাটো কাজের জন্য চলে যায়। পরীক্ষার আগে এসে তারা নিবন্ধন করতে চায়। কিন্তু তখন আর তারা সুযোগ পায় না। মেয়েদের অনেকের বিয়ে হয়ে যায়। তারা আসতে পারে না। ফলে এইচএসসিতে এ ঝরেপড়ার ঘটনা ঘটে।বোর্ড চেয়ারম্যান আরও বলেন, ঝরেপড়া নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো গবেষণা নেই। তবে আমরা সাধারণত এ দুটি কারণকেই প্রধান বলে মনে করি। প্রত্যেক বছরই কিছু না কিছু শিক্ষার্থী ঝরেপড়ার ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামেও কমেছে পরীক্ষার্থী এদিকে চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় ৩০৭ কলেজ থেকে ১ লাখ ২ হাজার ৮৬৯ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। চলতি বছর কলেজের সংখ্যা বাড়লেও গত বছরের চেয়ে কমেছে শিক্ষার্থী। যেখানে গত বছর কলেজের সংখ্যা ছিল ২৮৭ এবং পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৪ জন। আগামী ২৬ জুন থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হবে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।
এদিকে দুই মাস পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ করে একদল শিক্ষার্থী। তাদের দাবি, করোনার কারণে জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পরীক্ষা পেছানো দরকার। এ সময় তারা সুরক্ষা না পরীক্ষা সুরক্ষা সুরক্ষা বলে নানা স্লোগান দিতে থাকে।চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, পরীক্ষা পেছানোর মতো এখতিয়ার শিক্ষা বোর্ডের নেই। তাদের দাবি মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সীদ্ধান্ত নেবে। তবে আমাদের কাছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের দাবি দ্রুত পরীক্ষা নিয়ে নেওয়ার।তিনি বলেন, আমার বোর্ডে এক লাখের বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। আর পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানাতে এসেছে হাতেগোনা ৪০ জন। অন্তত ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী চায় যথাসময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হোক।চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের তথ্যমতে, মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭১ হাজার ৫২৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩১ হাজার ৮৩৯ ও ছাত্রী ৩৯ হাজার ৬৮৪ জন। শুধু মহানগরের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫ হাজার ৫৮৪ জন।