NEWSTV24
রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করে ঠেলে পাঠাচ্ছে আরাকান আর্মি
শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫ ১৫:০৫ অপরাহ্ন
NEWSTV24

NEWSTV24

মিয়ানমারের রাখাইনের বুথিডংয়ের শ্যালাপ্রাং গ্রামের বাসিন্দা আম্বিয়া খাতুন (৫৫)। প্রাণভয়ে গত মঙ্গলবার নৌকায় নাফ নদ পেরিয়ে নাইট্যংপাড়া সীমান্ত দিয়ে টেকনাফে আসেন তিনি। পরে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বজনের কাছে পরিবারের চার সদস্যসহ আশ্রয় নেন।আম্বিয়া যে নৌকায় এসেছেন, তাতে আরও ৩২ জন ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার আম্বিয়া জানালেন, রাখাইনে আরাকান আর্মির সদস্যরা তাদের নির্যাতন করেছে। যাদের কাছে অর্থ ছিল, তাদের পালানোর সুযোগ দেয়। পরে তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসে।আম্বিয়ার মতো নতুন করে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছেন। নতুন-পুরাতন মিলিয়ে বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। কবে নাগাদ তারা নিজ দেশে ফিরতে পারবেন, তা অনিশ্চিত।রাখাইনের প্রায় পুরো অংশ আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া ছাড়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো অসম্ভব; বলছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার ধীরে ধীরে রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তাও কমেছে। জনপ্রতি রোহিঙ্গা মাসে ১২ ডলার পায়। আগামী সেপ্টেম্বরের পর এর জোগান নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, প্রায় প্রতিদিন রোহিঙ্গা ঢুকছে। তাদের অনেকেই আরাকান আর্মির নির্যাতনের শিকার। সত্যি বলতে, আরাকান আর্মির সঙ্গে কী ধরনের সমঝোতা আমরা করতে পারব, তার ওপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নির্ভর করছে। এটা এখন অস্বীকার করার উপায় নেই তারা সীমান্তের আবশ্যিক অংশীজন।তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যে মানবিক সহায়তা পেয়ে আসছে, তার সংস্থান করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জনপ্রতি মাসে ১২ ডলারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এর পর কী হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা তরুণ মো. সেলিম বলেন, আরাকান আর্মি আমাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ চায়। দেওয়ার পর ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু কিছু দিন পর আবার ধরে নিয়ে যায়। ১৭ দিন আটকে রেখে অস্ত্রসহ বিভিন্ন কৌশলগত প্রশিক্ষণ দেয়। প্রশিক্ষণ করতে না চাইলে নির্যাতন করত। এভাবে ১৭ দিন পার করি। পরে একদিন আস্তানা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসি।

গত সোমবার দুটি নৌকায় ৬২ রোহিঙ্গা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আইয়ুব পরিবারের ১০ সদস্য নিয়ে টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, বুথিডংয়ে আরাকান আর্মি আমাদের ওপর খুব নির্যাতন চালাচ্ছে। অনেকেই খাবার ও চিকিৎসা পাচ্ছে না। কাউকে ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না। তিনি বলেন, অভাবের তাড়নায় গত সোমবার অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছি। আসার পথে আরাকান আর্মিসহ তিন জায়গায় মোট দেড় লাখ টাকা দিতে হয়েছে।নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, রাখাইনের অবস্থা দিন দিন জটিল হচ্ছে। সেখানে নির্যাতন করে রোহিঙ্গাদের সীমানা পার করে দিচ্ছে আরাকান আর্মি।