পুলিশের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগ দিতে চায় পুলিশ সদর দপ্তর। এরই অংশ হিসেবে পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোয় এএসআই পদে ৮ হাজার নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। গত সপ্তাহে এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে লিখিত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ধাপে ধাপে কনস্টেবল এবং নায়েক পদ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোয় মোট মঞ্জুরিকৃত পদ থেকে বিলুপ্ত করতে চায় পুলিশ সদর দপ্তর। এ ছাড়া ক্যাডেট এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগ পদ্ধতি চালু হলে ক্যাডেট এসআই (নিরস্ত্র) পদেও সরাসরি নিয়োগ পদ্ধতি পর্যায়ক্রমে বাতিলের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে এসআই (নিরস্ত্র ) পদটি শতভাগ পদোন্নতিযোগ্য পদ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে তিনটি গ্রেডের চারটি পদে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের বিধান চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৯ম গ্রেডের এএসপি পদে মঞ্জুরিকৃত পদের ৬৭ শতাংশ বিসিএসের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয়। অবশিষ্ট ৩৩ শতাংশ পদ ইন্সপেক্টর পদ হতে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। দশম গ্রেডে বাংলাদেশে পুলিশ মঞ্জুরিকৃত এসআই (নিরস্ত্র) পদের ৫০ শতাংশ পদ সরাসরি এবং ৫০ শতাংশ বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। দশম গ্রেডের সার্জেন্ট পদ শতভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে। আর ১৭তম গ্রেডে কনস্টেবল বাংলাদেশ পুলিশের মঞ্জুরিকৃত কনস্টেবল পদ শতভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হয়। তবে এএসআই পদ বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে।
পুলিশ সদর দপ্তর নতুন যে ৮ হাজার এএসআই পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, তার মধ্যে ৫০ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে এবং ৫০ শতাংশ নায়েক/কনস্টেবল হতে বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণের কথা বলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে সৃজিত এএসআই পদের ৫০ শতাংশ সরাসরি এবং ৫০ শতাংশ বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণের বিধান কার্যকরের প্রস্তাব করা হয়েছে।সূত্র জানিয়েছে, এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণের আগে পুলিশ সদর দপ্তর বাহিনীর সব ইউনিটে একটি মতামত জরিপ করে। ওই জরিপে পুলিশ কনস্টেবল ও নায়েকদের একটি বড় অংশই এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগের বিপক্ষে মতামত দেয়। তারপরও পুলিশ সদর দপ্তর এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সদর দপ্তর তাদের প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি ব্যাখ্যা করেছে।পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, পুলিশ কনস্টেবল এবং এসআইয়ের মধ্যবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পদ হলো এএসআই। মাঠপর্যায়ে বেশকিছু দায়িত্ব রয়েছে, যেগুলো তারা পালন করে থাকেন। যে কোনো ঘটনার অনুসন্ধানসহ এএসআইরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, বিভিন্ন ধরনের প্রশাসনিক ও অপারেশনাল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সার্বিক দিক বিবেচনায় এএসআই পদে নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে পুলিশ কনস্টেবল/নায়েক থেকে এএসআই পদে পদোন্নতির সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের প্রস্তাবে এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি/সমমান এবং এইচএসসি/সমমান উভয় ক্ষেত্রে ৩.৫ জিপিএ নির্ধারণ করা হবে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা সর্বনিম্ন বয়স ১৮ এবং সর্বোচ্চ ২২ বছর নির্ধারণ করা হবে। এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ৭ ইভেন্টের শারীরিক সক্ষমতা যাচাইসহ ২৫০ নম্বরের লিখিত এবং ২৫ নম্বরের বুদ্ধিমত্তা ও মৌখিক পরীক্ষা পদ্ধতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে।বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে বর্তমানে ২১ হাজার ৯৮টি এসআই (নিরস্ত্র), ২ হাজার ৯৪৬টি এসআই (সশস্ত্র), ১৮.৭৩৮টি এএসআই এবং ৭.৭৪৮টি এএসআই (সশস্ত্র) পদের মঞ্জুরি রয়েছে। এ ছাড়া ১ লাখ ৩০ হাজার ৩০৮টি কনস্টেবল, ৭ হাজার ৭৯৬টি নায়েক, ২ হাজার ৪৫টি এটিএসআই, ২ হাজার ১৬৫টি সার্জেন্ট, ৪৪৯টি টিএসআই, ২ হাজার ৯৪৬টি এসআই (সশস্ত্র), ২১ হাজার ৯৮টি এসআই (নিরস্ত্র), ৬ হাজার ৯২৮টি ইন্সপেক্টর, ১ হাজার ২৩১টি এএসপি, ১ হাজার ৮টি অতিরিক্ত এসপি, ৫৯৬টি এসপি, ২০১টি অতিরিক্ত ডিআইজি, ৮৭টি ডিআইজি, ২০টি অতিরিক্ত আইজি, দুটি গ্রেড-১ এবং সিনিয়র সচিব মর্যাদায় একজন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশের মঞ্জুরি রয়েছে। সব মিলিয়ে ২ লাখ ৩ হাজার ৩৬৭টি পুলিশ পদের মঞ্জুরি রয়েছে।