বাজারে সবজির সরবরাহ কম থাকায় দুই সপ্তাহ ধরে দাম বাড়তি। এর প্রভাব পড়েছে ডিমে। গত এক সপ্তাহে খামারের ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। তবে চালের বাজার আরও কমেছে। বিশেষ করে সরু বা মিনিকেট চালের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে কমেছে ২-৩ টাকা। শুক্রবার রাজধানীর মহাখালী, রামপুরা ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।রমজান মাস শুরুর পর থেকে প্রায় দুই মাস ডিমের দাম ছিল কম। এ সময় খামারের ডিমের ডজন সর্বনিম্ন ১১৫ থেকে সর্বোচ্চ ১২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে গত এক সপ্তাহে দুই দফায় ডজনে দর বেড়েছে ১০ টাকার মতো। ফলে প্রতি ডজন ডিম কিনতে ক্রেতার খরচ হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। তবে মহল্লার দোকানি কেউ কেউ ডজনে আরও ৫ টাকা বেশি রেখে ১৪০ টাকায় বিক্রি করছেন।ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে ডিমের। সে জন্য দামও বাড়তে শুরু করেছে। কেউ কেউ বলছেন, এতদিন খামারিরা লোকসান দিয়েছেন। এখন তারা কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সে জন্য দাম বাড়ছে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, এত দিন ডিমের দাম একেবারে কম ছিল। ১১০ টাকায়ও বিক্রি করতে হয়েছে মাঝেমধ্যে। খামারিরা ওই সময় কম দরে ডিম দিয়েছেন। এখন সেটা পুষিয়ে নেবেন।ডিমের সঙ্গে মুরগির দামও কিছুটা বাড়তি দেখা গেছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৮০ এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দর বেড়ে এখন ব্রয়লারের কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। অপরিবর্তিত রয়েছে সোনালি জাতের মুরগির দাম।সবজির দর আগের মতোই চড়া। বেশির ভাগ সবজির দাম ৬০ টাকার আশপাশে। প্রতি কেজি পটোল ৪০ থেকে ৬০, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৮০, টমেটো মানভেদে ৩০ থেকে ৪০, শসা ৬০ থেকে ৭০, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৭০, ঢ্যাঁড়শ ৪০ থেকে ৫০, ঝিঙে ৬০ থেকে ৭০, করলা ৬০ থেকে ৮০, লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ৭০ ও মিষ্টিকুমড়া ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লাউ প্রতিটা ৬০ থেকে ৭০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। কিন্তু অস্বাভাবিক দর দেখা গেছে পেঁপের। প্রতি কেজি পেঁপে কিনতে খরচ পড়ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে থাকে পেঁপের দাম। নতুন সবজি হিসেবে বাজারে দেখা মিলছে কচুমুখির; কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। আলুর দাম এখন বেশ তলানিতে। প্রতি কেজি কেনা যাচ্ছে ১৭ থেকে ২০ টাকায়। এখনও বেশ নাগালে রয়েছে কাঁচামরিচ। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকায়।
সবজি ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, শীত মৌসুমের সবজি শেষ। এখন গ্রীষ্মের সবজি আসছে। কিন্তু সেগুলোর সরবরাহ তুলনামূলক কম। অন্যদিকে উৎপাদন খরচও বেশি। সে জন্য তাদের বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।টানা কয়েক মাস উত্তাপ ছিল চালের বাজারে। এখন বোরো মৌসুমের ধান কাটা চলছে। ইতোমধ্যে বাজারে এ জাতের ধানের চাল আসতে শুরু করছে। বাজারে মিনিকেট বলে যে চাল বিক্রি হয়, তা এই বোরো ধানের চাল পলিশ করেই তৈরি করা হয়। এসব চালের সরবরাহ বাড়তে থাকায় দাম কিছুটা কমতির দিকে।গত দুই সপ্তাহের তুলনায় এ জাতের চাল কেজিতে কমেছে ১০ টাকার মতো। বাজারে এখন নতুন সরু বা মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৮২ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে এ মানের চালের কেজি কিনতে খরচ হতো ৮০ টাকার ওপরে। তবে এ মানের পুরোনো চালের কেজি এখনও ৮৫ টাকার ওপরে। মাঝারি (বিআর-২৮) চাল কেজিতে ২-৩ টাকা কমেছে। এ মানের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৭ থেকে ৬৫ টাকায়। মোটা চালের দরও দুই টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়।বোরো ধান পুরোপুরি উঠলে সরু চালের দাম আরও কমে যাবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তেজকুনিপাড়ার মায়ের দোয়া স্টোরের মালিক মো. হেলাল বলেন, আগামী সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম আরেকটু কমবে।